ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশের বিমান বিধ্বস্ত, যাত্রীরা আহত

পুলক ঘটক
2019.05.08
ঢাকা
190508_Biman_1000.jpg মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে দুর্ঘটনা কবলিত বাংলাদেশ বিমানের একজন যাত্রীকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। ৮ মে ২০১৯।
[এএফপি]

মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ। এতে যাত্রীদের প্রাণ রক্ষা হলেও উড়োজাহাজটির প্রায় সব আরোহী কমবেশি আহত হয়েছেন।

বুধবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটে সেখানে অবতরণের সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকায় বিমান বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা শাহীনা আক্তার।

বৈরী আবহাওয়ার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

“উড়োজাহাজটি যখন অবতরণ করছিল, তখন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছিল। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে অবতরণ করতে গিয়ে উড়োজাহাজটি ছিটকে পড়ে,” বলেন শাহীনা আক্তার।

ঢাকা থেকে বিমান বাংলাদেশের ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ মডেলের উড়োজাহাজটি ৩৩ জন আরোহী নিয়ে ইয়াঙ্গুন যাচ্ছিল। আরোহীদের মধ্যে এক শিশুসহ ২৯ জন যাত্রী, দুই পাইলট ও দুজন কেবিন ক্রু ছিলেন।

বিমানটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেলা ৩টা ২০ মিনিটে ইয়াঙ্গুনের উদ্দেশে যাত্রা করে।

দুর্ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরের কাছের হাসপাতালে আহতদের সর্বশেষ অবস্থা তদারক করতে যান ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী।

“আহতদের মধ্যে ওই বিমানের পাইলট শামীম নজরুল ও ফার্স্ট অফিসার কবিরুলসহ ১৯ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে কারও অবস্থাই গুরুতর নয়। দশজন যাত্রীকে বিমানবন্দরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে,” টেলিফোনে বেনারকে জানিয়েছেন মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী।

“আহতদের সবাই ইয়াঙ্গুনের নর্থ ওকলাপা হসপিটালে ভর্তি আছেন। আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাঁদের চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করছেন। সুচিকিৎসার জন্য ঢাকা থেকেও চিকিৎসক পাঠানো হচ্ছে,” বলেন রাষ্ট্রদূত।

বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত

দুর্ঘটনায় বিমানটিও বড় রকমের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান মঞ্জুরুল করিম। চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, ছিটকে পড়ার পর বিমানটি তিন খণ্ড হয়ে যায়।

দৈনিক মিয়ানমার টাইমস দেশটির বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বলেছে, “ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে বিমান চলাচল আপাতত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। আশপাশের বিমানগুলোকে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই বিমানবন্দরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।”

দুর্ঘটনায় পাইলটসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন বলে খবর দিয়েছে পত্রিকাটি।

অ্যাভিয়েশন সেইফটি নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, উড়োজাহাজটির মূল দেহকাঠামো (ফিউজিলাজ) ভেঙে তিন টুকরো হয়ে গেছে, তলাও ফেটে গেছে। তবে দুর্ঘটনার পর ওই বিমানে আগুন ধরেনি। ফলে যাত্রীরা নিরাপদে নেমে আসতে পেরেছেন।

মিয়ানমারের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যেসব ছবি এসেছে তাতে কানাডার কোম্পানি বোম্বার্ডিয়ারের তৈরি ড্যাশ ৮ উড়োজাহাজটিকে রানওয়ের পাশে সবুজ ঘাসের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

বৈরী আবহাওয়া দায়ী

দুর্ঘটনার জন্য কর্মকর্তাদের সবাই বৈরী আবহাওয়াকে দায়ী করেছেন। মিয়ানমারে বিমানের ম্যানেজার মীর আক্তারুজ্জামান বেনারকে বলেছেন, “উড়োজাহাজটি অবতরণের সময় আবহাওয়া ছিল খুবই খারাপ, ঘন ঘন বজ্রপাত হচ্ছিল।”

দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বেনারকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে মনে হচ্ছে বৈরী আবহাওয়ার কারণেই এটা হয়েছে। আমরা একটি তদন্ত কমিটি করতে যাচ্ছি। আর কোনও কারণ থাকলে তদন্তের পর সেটা উদ্ঘাটন হবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।