অ্যামনেস্টি প্রতিবেদন: বাংলাদেশে অব্যাহত হুমকির মুখে মত প্রকাশের স্বাধীনতা
2017.02.22
ওয়াশিংটন ডিসি
মত প্রকাশের স্বাধীনতা অব্যাহতভাবে হুমকির মুখে থাকার পাশপাশি গত বছর সংবাদ মাধ্যম ও সমালোচনার প্রতি সরকারের অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বুধবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এই বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনটিতে সরকারের পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়। সাংবাদিক গ্রেপ্তার ও সামাজিক মাধ্যমে মত প্রকাশের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের সমালোচনা করে বলা হয় “ভিন্নমত ও সমালোচকদের দমিয়ে রাখতে কর্তৃপক্ষ অস্পষ্ট আইসিটি আইনের অপপ্রয়োগ করেছে।”
অব্যাহত প্রবণতা
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আগের বছরের প্রতিবেদনের অনেক বিষয়ই এ বছরের প্রতিবেদনে আবার উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটির মতে গত এক বছরে এই ক্ষেত্রগুলোতে বাংলাদেশের অবস্থার পরিবর্তন হয়নি, বরং প্রবণতাগুলো অব্যাহত রয়েছে।
গত বছরের যে বিষয়গুলো চলতি বছরে অপরিবর্তিত রয়েছে সেগুলো হলো, মত প্রকাশের স্বাধীনতাহীনতা, গণমাধ্যম ও স্বাধীন মত প্রকাশ রোধে সরকারের অব্যাহত চাপ, সরকারি বাহিনীর দ্বারা নির্যাতন, গণ গ্রেপ্তার, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা।
পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের করা নিয়ন্ত্রণমূলক আইনেরও সমালোচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
জঙ্গি আক্রমণ ও পুলিশের অসহযোগিতা
প্রতিবেদনমতে গত বছর বাংলাদেশে জঙ্গি মদদপুষ্ট আক্রমণের প্রবণতা লক্ষ করা গেলেও পুলিশের ভূমিকা সহযোগিতামূলক ছিল না।
মুক্তমনা ব্যক্তি, সমকামী অধিকারকর্মী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ব্লগার ও বিদেশি নাগরিকসহ অন্তত ৩২জন গত বছর আক্রমণের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রতিবেদনটি। যার মধ্যে সমকামীদের ম্যাগাজিন রূপবান সম্পাদক জুলহাস মান্নান, তাঁর সহকর্মী তনয় মজুমদার এবং ব্লগার নাজিমউদ্দিন সামাদ এর হত্যার মতো ঘটনা রয়েছে।
বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়াও অব্যাহত আক্রমণের জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “জঙ্গিদের কাছ থেকে হত্যার হুমিক পাওয়া অনেকেই পুলিশের কাছ থেকে যথেষ্ট সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।”
আবার অনেকেই হয়রানির ভয়ে পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে জাননি বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার ও গুম
গত বছর পুলিশ দেড় হাজারের মতো মানুষ গেপ্তার করেছে। তবে মানবাধিকার কর্মীদের মতামত ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি জানায় “এদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার হওয়া বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী।”
অধিকারের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে প্রতিবেদনটি জানায় “অন্তত ৯০ জনকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ে যাবার পর তাদেরকে আর কোনোদিন কোথাও দেখা যায়নি।”
“কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে দায় অস্বীকার করে যাচ্ছে, অন্যদিকে নিখোঁজদের পরিবার জানে না তারা কোথায় আছে।”
গুম হওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে মন্তব্য করে প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনটিতে পুলিশ ও র্যাব এর জিম্মায় নাগরিকদের নির্যাতনের সমালোচনা করে বলা হয় “ভয়ভীতি দেখানো, স্বীকারোক্তি আদায় অথবা বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক কর্মীদের শায়েস্তা করার জন্যই এই ধরনের নির্যাতন চালানো হয়।”
কল্পনা চাকমা এবং নারী নির্যাতন চিত্র
অ্যামনেস্টির এ বছরের প্রতিবেদনে ১৯৯৬ সালে অপহৃত কল্পনা চাকমার বিষয়টি উঠে আসে। গত সেপ্টেম্বরে পুলিশ কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার তদন্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত চেয়ে কোর্টে আবেদন করে।
বিষয়টির সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয় “আদালতের বাইরে আপোষ করার চাপ, বিচারকের অপ্রতুলতা এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতার কারণে পার্বত্য অঞ্চলের নারীরা বিচার বঞ্চিত হন।”
সারা দেশে গত বছর নারী ও কন্যাশিশুদের উপর নির্যাতন বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সূত্র উল্লেখ করে বলা হয় “অন্তত ৬৭১টি ধর্ষণ ঘটনা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।”
“তবে প্রকৃত ধর্ষণ ঘটনা এর থেকে অনেক বেশি। কারণ অনেক নারীই লজ্জা ও পুলিশি হয়রানির ভয়ে ধর্ষণের কথা প্রকাশ করেন না।”
জানায় অ্যামনেস্টির এ বছরের প্রতিবেদন।