বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছে ধর্ষণের বিরুদ্ধে গ্রাফিতি আঁকায় দুই ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে মামলা

আহম্মদ ফয়েজ
2024.02.23
ঢাকা
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছে ধর্ষণের বিরুদ্ধে গ্রাফিতি আঁকায় দুই ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে মামলা জাহাঙ্গীরনগরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রনেতাদের বহিষ্কার ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪।
[বেনারনিউজ]

জাতির জনকের প্রতিকৃতি মুছে সেখানে ধর্ষণবিরোধী দেয়ালচিত্র আঁকার অভিযোগে দুই ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন বেনারকে বলেন, “কোন আইনে, কোন ধারায় মামলা করা হয়েছে সে বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। তবে এতটুকু বলতে পারি রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবং রেজিস্ট্রারের নির্দেশে তিনি সাভারের আশুলিয়া থানায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি অমর্ত্য রায় এবং সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে এই মামলা দায়ের করেছেন জানিয়ে বলেন, “আপনারা নিশ্চয়ই জানেন জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন রয়েছে এবং এই বিষয়গুলো সংরক্ষণে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে।”

এর আগে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির এক বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় এই দুই ছাত্রনেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে প্রশাসন।

এই বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসজুড়ে যখন আন্দোলনে সরব একদল শিক্ষার্থী, সেই সময় মামলাটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে মামলা হলেও শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলার বিষয়ে গণমাধ্যমকে কিছুই জানায়নি আশুলিয়া থানা পুলিশ।

ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দিনভর বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনও তথ্য বা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দেয়ালে থাকা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছে সেখানে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর থেকে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ তিন দফা দাবিতে টানা চারদিন অনশন কর্মসূচি পালন করেন সরকারি ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দুই নেতা।

এসময়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জড়িতদের শাস্তির আশ্বাস দিয়ে অনশনকারীদের ডাবের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান।

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত

গত ৩ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী মুস্তাফিজুর রহমান এবং তার সহযোগীরা ক্যাম্পাসে এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে।

এ ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে ওই নেতাকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।

এই ঘটনার জেরে চলমান আন্দোলনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সহ সভাপতি আশফার নবীন বেনারকে বলেন, যে দেয়ালে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রায় মুছে যাওয়া একটি প্রতিকৃতি ছিল। পাশেই বিশাল আকারে আরেকটি প্রতিকৃতি রয়েছে বঙ্গবন্ধুর। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে এরকম পুরোনো হয়ে যাওয়া দেয়ালচিত্র মুছে নতুন কিছু আঁকা নতুন ঘটনা নয়।

“যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রলীগের নাম উঠে এসেছে তাই তারা বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাবার চেষ্টা থেকে এসব করছে,” দাবি আশফারের।

তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও দুই নেতার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে না দিলে সাধারণ ছাত্র সমাজ কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন বেনারকে বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সেখানকার চলমান ঘটনায় কর্তৃপক্ষ যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাতে ছাত্রলীগের সমর্থন রয়েছে।”

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছে গ্রাফিতি আঁকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু জাতীয় ঐক্যের প্রতীক, তাঁর ছবি মুছে কোন প্রকার গ্রাফিতি সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা চাই এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ কঠোর ভূমিকা দেখাক।”

ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে নেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল বেনারকে বলেন, “যেকোনো ভালো কাজের প্রশংসা করার বদলে তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অন্যায় কাজকে সমর্থন দেয়ার এক ভয়ংকর দৃষ্টান্ত এটি। দুই ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ করা হলো।”

সমাজের প্রায় সর্বস্তরেই এমনটি হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এর ভয়াবহ পরিণতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

কবির বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা 

এদিকে দুইদিন জেলে থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর নগরীর জনদুর্ভোগ ও সমস্যা নিয়ে পোস্টার ডিজাইন করার ‘অপরাধে’ গ্রেপ্তার কবি ও গ্রাফিক ডিজাইনার শামীম আশরাফের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন।

তরুণ এই কবিকে গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে সমালোচনার মধ্যে গত মঙ্গলবার তাঁকে আদালত জামিনে মুক্তি দেয়ার দিনই সিটি করপোরেশনের পক্ষে প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার নন্দী বাদী হয়ে ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটি করেন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী আবদুল মালেক সাংবাদিকদের জানান, বিচারক বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন এবং আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।

কবি শামীম আশরাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ৭ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন দেয়ালে সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে বেআইনিভাবে সিটি করপোরেশনের লোগো ব্যবহার করে পোস্টার সাঁটানো হয় যেগুলোর ডিজাইন করেছেন তিনি।

ওই পোস্টারগুলোতে বিভিন্নরকম স্লোগান ও দাবি ছিল। যার মধ্যে রয়েছে– “শোষক নয় সেবা চায় নগরবাসী, হোল্ডিং ট্যাক্সের পাহাড়সম বোঝা কেন সাধারণ মানুষের উপর চাপাও, দেশের একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে ঠিকাদার একজন, মালিক একজন, শাসকও একজন।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।