‘আরসার’ হামলায় তিন রোহিঙ্গা খুন

আব্দুর রহমান ও আহম্মদ ফয়েজ
2024.06.10
কক্সবাজার ও ঢাকা
‘আরসার’ হামলায় তিন রোহিঙ্গা খুন কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে গুলিতে নিহত তিন রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ১০ জুন ২০২৪
[বেনারনিউজ]

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে তিন রোহিঙ্গা শরণার্থী খুন হয়েছেন নিশ্চিত করেছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। । এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো সাতজন।

নিহত রোহিঙ্গারা হলেন, ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশনের মো. ইলিয়াস, মো. ইসহাক ও ক্যাম্প-৩ ই-৬৪ এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ খান।

সোমবার (১০ জুন) সকালে উখিয়ার ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. ইকবাল।

‘আরসার’ সন্ত্রাসীরা এই ঘটনায় জড়িত রয়েছে উল্লেখ করে অধিনায়ক মো. ইকবাল বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন করে সংগঠিত এবং নাশকতার চেষ্টা করছে আরসা সন্ত্রাসীরা। এতে ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবকরা বাঁধা দিলে সংঘবদ্ধ হয়ে সোমবার ভোরে ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশনে হামলা চালায় আরসা সন্ত্রাসীরা।”

‘‘এতে তারা তিনটি পয়েন্টে গুলি এবং কুপিয়ে তিন রোহিঙ্গাকে হত্যা করে। এ সময় গুরুতর আহত হয় আরো ৭ জন। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছুলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ চালায়। তবে আমাদের কোনো লোকজন হতাহত হয়নি,” বলেন তিনি।

উখিয়া থানার পরিদর্শক মো. শামীম হোসেন বলেন, নিহত তিন রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয় বলেও জানান তিনি।

এদিকে শরণার্থী শিবিরে সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারের জন্য আরসা ও আরএসওর মধ্যে বেশ কিছুদিন থেকেই ব্যাপক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।

 

বেড়েছে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য

সম্প্রতিকালে, শরণার্থী শিবিরগুলোতে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে বলে দাবি করেছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের তথ্যমতে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলতি বছরে ২০ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এছাড়া গত বছর হত্যার শিকার হয় ৬৪ জন রোহিঙ্গা।

এ বিষয়ে র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের আইন ও গণমাধ্যম শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বেনারকে বলেন, “ক্যাম্পগুলোতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম নির্মূলে আমরা গোয়েন্দা তৎপরতার পাশাপাশি সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছি। এতে আরসাসহ অনেক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার হচ্ছে।”

উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা নুর হোসাইন বেনারকে বলেন, “ক্যাম্পে হঠাৎ ফের সন্ত্রাসীদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। যার কারণে ক্যাম্পে মারামারি-হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে। মূলত আরসা-আরএসও মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনাও প্রতিদিন রাতে ঘটছে। তাদের দ্বন্দ্বের কারণে অনেক সময় সাধারণ রোহিঙ্গারা মারা যাচ্ছে।”

কুতুপালং শিবিরের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মোহাম্মদ রফিক বেনারকে বলেন, “মাস্টার মুহিবুল্লাহ হত্যার পর ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান শুরু হলে অনেক দিন ক্যাম্পগুলো নিরাপদ ছিল। কিন্তু আবারও ক্যাম্পগুলো আস্তে আস্তে সন্ত্রাসীদের দখলে চলে যাচ্ছে। এর ফলে প্রায় সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।”

তিনি বলেন, “বিশেষ করে আমরা যারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়াসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করি, তারা খুবই বিপদে আছে। তাই অনেকে রাতে ক্যাম্পে বাইরে পার করে। তবে এটাও সত্য, এপিবিএন পুলিশ সদস্যরা আমাদের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করছেন।”

উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পের বাসিন্দা আবদুর রহিম বেনারকে বলেন, “ক্যাম্পে সব চেয়ে বেশি বিপদে আছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। কারণ ক্যাম্পে অপরাধ চক্রে যুক্ত হতে রোহিঙ্গাদের বাধ্য করা হয়। না হলে এখানকার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরা মেরে ফেরার হুমকি দিয়ে থাকে। তাদের কথা না শুনলে হত্যারও শিকার হয় অনেকে। এসবের কারণে ক্যাম্পের মানুষজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।”

৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আমির জাফর বেনারকে বলেন, “ক্যাম্পে মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) ও স্বেচ্ছাসেবীদের কারণে অপরাধীদের কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়। তাই অনেক সময় ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়।”

তিনি বলেন, “ক্যাম্পে নতুন করে সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কোনো সন্ত্রাসী দলকে আমরা এখানে ঠাঁই নিতে দেব না। এজন্য ক্যাম্প এলাকায় টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”

 

মুহিব উল্লাহ হত্যার পরিকল্পনাকারীসহ আটক ৫

এদিকে রোববার দিবাগত রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আলোচিত মাস্টার মুহিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা’র অন্যতম নেতা মোঃ শহিদুল ইসলাম প্রকাশ ওরভে মৌলভী অলি আকিজসহ পাঁচজন জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব- ১৫।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এ বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে: কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, আরসার শীর্ষ নেতা মৌলভী আকিজসহ সন্ত্রাসীরা ক্যাম্প ৪ এ অবস্থান করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে  আরসার শীর্ষ নেতা মৌলভী আকিজসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরকও উদ্ধার করা হয়।

লে. কর্নেল সাজ্জাদ আরও বলেন, আরসার শীর্ষ নেতা মৌলভী আকিজ রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিব উল্লাহ হত্যা ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, অপহরণসহ ২১টির বেশি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।