কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা চুরি: নিউ ইয়র্কে আরেকটি মামলা করেছে বাংলাদেশ

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.06.02
ঢাকা
bangladesh-Bank_620.jpeg ঢাকার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের সামনে যাত্রীর অপেক্ষায় কয়েকজন রিকশাওয়ালা। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
[রয়টার্স]

চার বছরের বেশি সময় আগে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির ব্যাপারে নিউ ইয়র্কের আদালতে আরেকটি মামলা করেছে বাংলাদেশ।

গত সপ্তাহে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) ও সেদেশের অভিযুক্ত ক্যাসিনোসহ মোট ১৭টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে বলে মঙ্গলবার বেনারকে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ফিনানশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান।

চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের এটি দ্বিতীয় মামলা। এর আগে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নিউ ইয়র্কে মার্কিন ফেডারেল আদালতে প্রথম মামলা করেছিল বাংলাদেশ।

সেই মামলায় বাংলাদেশের উত্থাপিত মোট নয়টি অভিযোগের মধ্যে আটটি আমলে নিয়ে ফিলিপাইনের ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্ক রাজ্য আদালতে মামলা করতে বাংলাদেশকে নির্দেশ দিয়েছিল মার্কিন ওই ফেডারেল আদালত।

দ্বিতীয় মামলার যুক্তি কী?

অর্থ চুরির ঘটনায় ফৌজদারি বিচার চলছে ফিলিপাইনে। বিচারের সাথে জড়িত রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপকসহ কয়েকজনকে সাজাও দিয়েছে দেশটির আদালত।

আবার বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ফৌজদারি তদন্ত পরিচালনা করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সেই তদন্ত এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি।

ইতোমধ্যে ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৭ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করতে পেরেছে বাংলাদেশ। অবশিষ্ট ৬৪ মিলিয়ন ডলারের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

টাকা ফেরত পেতে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নিউ ইয়র্কে একটি মার্কিন ফেডারেল আদালতে সিভিল মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ বেনারকে বলেন, “ফিলিপাইনের আরসিবিসি ও ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে আমরা মোট নয়টি অভিযোগ এনেছিলাম মার্কিন ফেডারেল আদালতে। ফেডারেল আদালত এ বছর মার্চে শুনানি শেষে একটি বাদে আটটি অভিযোগ আমলে নিয়েছিল এবং বলেছিল আমরা চুরি, চক্রান্ত, প্রতারণাসহ অন্যান্য অপরাধের জন্য নিউ ইয়র্ক রাজ্য আদালতে মামলা করলে সেগুলোর প্রতিকার মিলতে পারে।”

তিনি বলেন, “আটটি অভিযোগ আমলে নেয়ার অর্থ হলো, আমাদের অভিযোগগুলোর ভিত্তি আছে। ফিলিপাইন যে ফৌজাদারি বিচার করছে সেব্যাপারে আমাদের বলার কিছু নেই। আমরা কোনো ফৌজদারি মামলা করিনি। আমরা দেওয়ানি মামলা করেছি। এর উদ্দেশ্য হলো, আমাদের টাকা ফিরে পাওয়া।”

বাংলাদেশ ফিনানশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের প্রধান রাজী হাসান বেনারকে বলেন, “ফেডারেল আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আমরা গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্ক রাজ্য আদালতে মামলা করেছি। কারণ, ফেডারেল আদালত বলেছে, অপরাধের স্থান নিউ ইয়র্ক। আমরাও তাই বলেছি। ফেডারেল আদালতের এই রায় আমাদের অবস্থানকে নিশ্চিত করেছে।”

তিনি বলেন, “আরসিবিসি বলছিল অপরাধ সংঘটনের স্থান নিউ ইয়র্ক নয়, ফিলিপাইন। তাই আমেরিকায় মামলা চলতে পারে না। ফেডারেল আদালতের রায়ের পর ফিলিপাইনের সেই অবস্থান টেকেনি।”

রাজী হাসান বলেন “দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির অভিযোগ আমরা এনেছিলাম। কিন্তু ফেডারেল আদালত সেই অভিযোগ গ্রহণ করেনি। আমরা ফেডারেল আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছি।”

তিনি বলেন, “দ্বিতীয় মামলা করার ফলে এখন আমাদের টাকা উদ্ধারের মামলা শুনানি করে রায় দেবে নিউ ইয়র্ক রাজ্য আদালত। আশা করি রায় আমাদের পক্ষে আসবে। আমরা টাকা ফেরত পাব।”

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটির দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলে হ্যাকাররা। তারা এক বিলিয়ন ডলার চুরির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভূয়া আদেশ দিতে থাকে। সেই আদেশের বেশ কিছু বাস্তবায়ন করে ১০১ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক।

সেই টাকা পার করা হয় ফিলিপাইনের আরসিবিসি’র কয়েকটি হিসাবে যেগুলো চুরির কিছুদিন আগে খোলা হয় এবং ওই হিসাবগুলোতে আর কখনও কোনো লেনদেন হয়নি।

৮১ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর হয় ফিলিপাইনের আরসিবিসিতে। ফেড রিজার্ভ এবং বাংলাদেশে ব্যাংকের পক্ষ থেকে টাকা ছাড় করতে নিষেধ করা হলেও খুব দ্রুততার সাথে চুরি যাওয়া সেই অর্থ দিয়ে দেয় আরসিবিসি।

আর ২০ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয় শ্রীলঙ্কার একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাবে। তবে সন্দেহ হওয়ার টাকা আটকে দেয় শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে স্থানান্তরিত করা হয়।

তথ্য পাওয়ার অপেক্ষায় সিআইডি

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সংঘবদ্ধ অপরাধ শাখার প্রধান এবং পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক ইমতিয়াজ আহমেদ বেনারকে বলেন, “অর্থ চুরির ঘটনা নজরে আসার পর থেকে আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। মোটামুটিভাবে যারা অপরাধটি সংঘটিত করেছে এবং তা কীভাবে করেছে, বের করা গেছে। তবে আরও সুনিশ্চিতভাবে প্রকাশ করতে গেলে আরও কিছু তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “আমরা ফিলিপাইনসহ পাঁচ–ছয়টি দেশের কাছে তথ্য চেয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে তথ্য পেতে সময় লাগে। সেকারণে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে পারছি না। আমরা তথ্য পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করছি।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।