পঞ্চগড়ে নৌকাডুবিতে ২৪ জনের মৃত্যু, ২৩ জনই পূণ্যার্থী
2022.09.25
ঢাকা
পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীতে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবে নারী-শিশুসহ অন্তত ২৪ জন মারা গেছেন, নিখোঁজ রয়েছেন আরো প্রায় ২০ জন।
নিহতদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাঁরা শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়া উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান শেষে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ফিরছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পঞ্চগড় জেলা পুলিশ সুপার এস. এম. সিরাজুল হুদা বেনারকে বলেন, “নৌকা ডুবির পরপরই ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।”
“এ ছাড়া ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকায় চারজনের মৃতদেহ পাওয়া যায় এবং পঞ্চগড় জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরো আটজন,” বলেন তিনি।
হিন্দু ধর্মমতে, মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার মর্তে আগমনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়। দেবী আবাহনের সেই উৎসবেই প্রতিবছরের মতো এবারও পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বরদেশ্বরী মন্দিরে বসেছে উৎসব, সেই উৎসব থেকেই ফিরছিলেন তাঁরা।
গত বছরের ডিসেম্বর ঝালকাঠি জেলায় একটি লঞ্চে আগুন লেগে ৫০জন নিহত হবার পর পঞ্চগড়ের এই দুর্ঘটনাটিই নৌপথে বড়ো কোনো দুর্ঘটনা।
করোতোয়ায় ডুবে যাওয়া নৌকার মাঝিও প্রাণে বাঁচেননি জানিয়ে পুলিশ সুপার সিরাজুল হুদা বলেন, “তিনিই মৃতদের মধ্যে একমাত্র মুসলিম।”
নিহতদের মধ্যে ১২ জন নারী, আটজন শিশু এবং বাকি চারজন পুরুষ বলে জানান পুলিশ সুপার।
তিনি জানান, উদ্ধারকারীরা নদী থেকে ৪৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন এবং অনেক যাত্রী নিজেরাই সাঁতরে কূলে উঠে এসেছেন। দুর্ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় ১৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
উদ্ধারকারীরা এখনও নিখোঁজদের সন্ধান করছেন এবং এটি আগামীকাল (সোমবার) পর্যন্ত চলবে বলেও জানান তিনি।
যাত্রী ছিল বহনক্ষমতার বেশি
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সহকারী পরিচালক শেখ মোঃ মাহবুব ইসলাম বেনারকে বলেন, “ইঞ্জিন-বোটটিতে ৫০ জন যাত্রী বহন করার ক্ষমতা থাকলেও ১০০ জনের বেশি যাত্রী ছিল।”
“আমাদের দুটি উদ্ধারকারী দল পুরো রাত (রোববার রাতে) উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাবে এবং আগামীকাল সকালে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,” যোগ করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আজম আলী সাংবাদিকদের জানান, নৌকাটি চলতে শুরু করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ডুবে যায়। নৌকাটিতে অনেক যাত্রী ছিল। অনেক মহিলা যাত্রী তাঁদের বাচ্চাদের সাথে নৌকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।”
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মোঃ জহুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
জহুরুল বলেন, সরকার প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে বিশ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আহতরা চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা পাবেন।
নদীপথে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা পঞ্চগড় জেলার মানুষ কখনো দেখেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকাডুবিতে ২৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন।
অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্যমতে, ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে কমপক্ষে ২৮৬ জন মানুষ নৌপথ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।