করতোয়ায় নৌকাডুবি: মৃতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে

আহম্মদ ফয়েজ
2022.09.26
ঢাকা
করতোয়ায় নৌকাডুবি: মৃতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমের সামনে স্থাপিত বোর্ডে করোতোয়া থেকে উদ্ধার করা যেসব লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি তাঁদের ছবি দেখছেন পঞ্চগড়ে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের স্বজন ও স্থানীয়রা। সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২।
[বেনারনিউজ]

পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে রোববার ইঞ্জিনচালিত নৌকাডুবির ঘটনায় সোমবার আরো ২৭টি মৃতদেহ উদ্ধারের পর নারী-শিশুসহ মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ৫১ জনে, নিখোঁজ রয়েছেন আরো প্রায় ৪০ জন।

নিখোঁজদের সন্ধান পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া হবে জানিয়ে পঞ্চগড় জেলা পুলিশ সুপার এস. এম. সিরাজুল হুদা বেনারকে বলেন, “সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কমপক্ষে ৫১টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং এখনো প্রায় ৪০জন নিখোঁজ রয়েছেন।”

তিনি জানান, মৃতদের মধ্যে শুধুমাত্র নৌকার মাঝি ছাড়া অন্য সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দীপঙ্কর কুমার রায় জানান, সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যেসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তার মধ্যে পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার খানসামার আত্রাই নদীর জিয়া সেতুর নিচ থেকে উদ্ধার করা লাশ রয়েছে।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে স্রোতের টানে অনেক মরদেহ আশপাশের নদীতে ভেসে গেছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

মরদেহগুলো ইতোমধ্যে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে কত যাত্রী ছিল, তার সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা প্রশাসনের কাছে রোববার রাতে ৬৬ জনের তালিকা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৪০ জন।

3.jpg
পঞ্চগড়ের করোতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় মরদেহের সন্ধান করছেন স্থানীয় জনসাধারণ ও নিখোঁজদের আত্মীয়স্বজন। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২। [বেনারনিউজ]

করতোয়া পারে স্বজনদের ভিড়

সোমবার নিখোঁজদের স্বজনরা ভিড় করেছেন করোতোয়া নদীর পারে। এই সময় তাঁরা আহাজারি করতে থাকেন।

নৌকাডুবির ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া বামনপাড়া এলাকার সুবাস চন্দ্র রায় নদীর পারে সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমিও নৌকায় ছিলাম। নৌকায় দেড়শর বেশি যাত্রী ছিল। আমরা ওঠার পরপরই নৌকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। এ সময় মানুষজন নৌকার মধ্যেই হুড়োহুড়ি শুরু করেন।”

“আমরা পাঁচ বন্ধু ছিলাম। কোনোমতে সাঁতার কেটে প্রাণে বেঁচে যাই। …কিন্তু শেষ সময়ের বর্ণনা করতে পারব না। তবে এত মানুষ মারা যাবে, এটা বুঝতে পারিনি,” বলেন সুবাস চন্দ্র রায়।

কৃষ্ণ চন্দ্র রায় (৬০) নদীর পারে এসেছিলেন তাঁর ভাই ও ভাইয়ের ছেলের খোঁজে। তিনি জানান, রোববার নৌকা ডুবে যাওয়ার পর থেকেই নদীর পারে অপেক্ষা করছেন তিনি।

বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজায় যোগ দিতে গিয়ে তাঁর ভাই নরেশ ও ভাইয়ের ছেলে সিন্টু আর বাড়ি ফেরেননি।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ দূতাবাসের সমবেদনা

করতোয়া নদীতে ইঞ্জিন চালিত নৌকাডুবির ঘটনায় নিহত, আহতদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

সোমবার শোকবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বলেছে, “পঞ্চগড়ে মহালয়া উদযাপন শেষে ফেরার সময় করতোয়া নদীতে নৌ-দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাই।”

“আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের এবং তাঁদের পরিবারের জন্য আমাদের আন্তরিক সহানুভূতি ও প্রার্থনা জানাই,” বলা হয় মার্কিন দূতাবাস শোকবার্তায়।

অপরদিকে পৃথক শোকবার্তায় নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।