কাবুলে আটকে পড়া বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬০ ছাত্রী মার্কিন সামরিক বিমানে সৌদি পৌঁছেছেন
2021.08.30
ঢাকা
অবশেষে আফগানিস্তান ছাড়তে সক্ষম হয়েছেন চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ১৬০ জন আফগান শিক্ষার্থী; যারা কাবুল বিমানবন্দরে আইএসএর ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলার কারণে আটকে ছিলেন। একইসঙ্গে সেখানে আটকে পড়া অন্তত ১২ জন বাংলাদেশিও কাবুল ছেড়েছেন।
গত শনিবার তাঁরা আফগানিস্তান ছাড়েন বলে বেনারকে নিশ্চিত করেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁরা এখনো বাংলাদেশে পৌঁছাননি।
পাঁচ বাংলাদেশিসহ আফগান শিক্ষার্থীরা কাবুল থেকে মার্কিন সামরিক বিমানে সৌদি আরব পৌঁছেছেন বলে বেনারকে জানান দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (প্রেস) মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।
“বর্তমানে তাঁরা মার্কিন সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আছেন। তাঁদের পরবর্তী গন্তব্য কবে, কোথায় সেটি এখনো জানি না। তবে তাঁদের সাথে থাকা পাঁচজন বাংলাদেশি এখান থেকে দেশে ফিরবেন,” বেনারকে বলেন ফখরুল ইসলাম।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, “অত্যন্ত খুশির সংবাদ যে, আমাদের প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্রী আফগানিস্তান থেকে বের হতে পেরেছে। এর সঙ্গে অনেকের প্রচেষ্টা জড়িত। সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ।”
“দেশটির পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সাথে সাথেই আমাদের সাথে তারা যোগাযোগ করছিল। এদের মধ্যে নতুন ভর্তি হওয়া এবং বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন,” বলেন তিনি।
“তবে সহসাই তাদের বাংলাদেশে আসার সুযোগ নেই। যেখানে তারা পৌঁছেছেন সেখানে আপাতত তাদের পিসিআর টেস্ট করানো হয়েছে। তারা আইসোলেশনে আছেন,” বলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ওই কর্মকর্তা।
তাঁদের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বেনারকে বলেন, “এই শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে তারা কবে পৌঁছাবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।”
উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বেনারকে বলেন, “আফগানিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের মধ্যে অন্তত ১২ জন বিভিন্ন বিমানে করে কাতার, সৌদি আরব এবং তাজাকিস্তানে পৌঁছেছেন। সেখানে থেকে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে তাঁরা দেশে ফিরবেন। এখন তাঁদের ফেরার আনুষ্ঠানিকতা চলছে। আমাদের দূতাবাসগুলো সহায়তা করছে।”
চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের শিক্ষার্থীরা করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশে গিয়েছিলেন। এরপর তালেবান কাবুল দখল করে নেওয়ার পর তাঁরা আটকা পড়েন, ফেরার ফ্লাইট পাচ্ছিলেন না।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, সংখ্যাটা ১৬০ কিনা এখনো নিশ্চিত না। তাদের বিষয়ে সব তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ১৫৫-১৬০ জনের মতো হবে বলে জানান তাঁরা।
আফগান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ১২ বাংলাদেশি নাগরিকের গত বুধবারই দেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু সন্ত্রাসী হামলার সতর্কতার কারণে সেদিন তাঁদের কাবুল বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়। তারা ফিরে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর বিমানবন্দরের বাইরে আইএস এর আত্মঘাতী বোমা হামলায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।
গত ১৫ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলের পর বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের পাশাপাশি আফগানিস্তানের লোকজনও দেশ ছাড়ছেন। বর্তমানে দেশটির শুধু কাবুল বিমানবন্দর চালু রয়েছে। কিন্তু কোনো বাণিজ্যিক ফ্লাইট না থাকায় অনেকেই আটকা পড়েছেন।
কাতারে ছয় বাংলাদেশি
গত শনিবার ছয়জন বাংলাদেশি কাবুল থেকে কাতারে পৌঁছেছেন বলে বেনারকে জানান তাঁদের একজন রাজীব বিন ইসলাম। তিনি আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড়ো মোবাইল অপারেটর ওয়্যারলেসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
সোমবার কাতার থেকে মুঠোফোনে রাজীব বেনারকে বলেন, “বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর পর্যন্ত দুই দফা চেষ্টার পরেও আমরা কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারিনি। শনিবার আমাদের কোম্পানির সহায়তায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে করে আমরা কাতারে পৌঁছাই।”
তিনি বলেন, “যখন বিমানে উঠেছিলাম তখনও জানি না আমরা কোথায় যাচ্ছি। প্রথম শুনলাম আমাদের বহনকারী বিমানটি কুয়েত হয়ে জার্মানি যাবে। তখন আমরা শুধু চেয়েছিলাম আফগানিস্তান ছাড়তে। এরপর দেখি বিমানটি কাতারে অবতরণ করে।”
“তবে আমরা আফগানিস্তান থেকে কোনো বহির্গমন পাস নিয়ে আসতে পারিনি.” জানিয়ে রাজীব বলেন, “কাতারে কিছু ফর্মালিটিজ রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের দূতাবাস সাহায্য করছে।”
তাঁরা বর্তমানে কাতারের একটি হোটেলে রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, যে কয়জন বাংলাদেশি ফেরেননি তাঁরা হয় স্বেচ্ছায় থেকে গেছেন অথবা পরিস্থিতি আরো ভালো হওয়ার পর আসতে পারেন।
গত বুধবার একটি ফ্লাইটে ১৬০ জন আফগান শিক্ষার্থী সাথে ১৫ বাংলাদেশির বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। অপেক্ষমাণ সবাই সাতটি গাড়িতে করে প্রায় ৪০ ঘণ্টা ধরে কাবুল বিমানবন্দরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। এরই মাঝে বিমানবন্দরের বাইরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।
“গত বুধবার দুপুর থেকে সাতটি গাড়িতে করে কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে অপেক্ষায় ছিলাম। বৃহস্পতিবার একটা সময়ে মার্কিন বাহিনী আমাদেরকে উত্তর গেট (বিমানবন্দরের) থেকে দক্ষিণ গেটে যেতে বলে। আমরা দক্ষিণ গেট থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে ছিলাম। তখনই বিমানবন্দরের অপরদিকে প্রথম বোমা বিস্ফোরণটি ঘটে, যা আমাদের থেকে ৩০ মিনিটের (ড্রাইভিং) দূরত্বে ছিল” জানান রাজীব।
“হামলার পরপরই দ্রুত এয়ারপোর্টের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমরাও ফিরে আসতে বাধ্য হই। অনেক রাতে আমরা নিজেদের কোম্পানির রেসিডেন্সে ফেরত আসি। আফগান শিক্ষার্থীরাও নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফেরত যায়,” বলছিলেন রাজীব বিন ইসলাম।
রাজীব বলেন, “মার্কিন সামরিক বাহিনী আফগান মেয়েদেরসহ আমাদের কাবুল ছাড়ার বিষয়টি দেখভাল করছিল। আমাদের সাথে ১৬০ জন আফগান মেয়ে থাকায় বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নেয় মার্কিন প্রশাসন।”
আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে রাজীব বিন ইসলাম বলছিলেন, শহরের ভিতরে একবারেই ভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তালেবানরা ক্ষমতা নেয়ার পরে জেলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে সব ধরনের সন্ত্রাসী বের হয়ে গেছে। তারা নানা রকম বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে।”