টুইটারে আরসার দাবি: ডিজিএফআই কর্মকর্তাকে তারা হত্যা করেনি
2022.12.02
ঢাকা ও কক্সবাজার

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) এক কর্মকর্তা হত্যার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)।
শুক্রবার কমান্ডার-ইন-চিফ আবু আম্মার জুনুনী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে আরসা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। বিবৃতিটি টুইটারে পোস্ট করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে পুলিশ বলছে, আরসার এই বিবৃতি তাদের তদন্তে কোনো প্রভাব ফেলবে না এবং আসামিদের গ্রেপ্তার করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
কী বলেছে আরসা?
শুক্রবার দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, আরসার মূল উদ্দেশ্য হলো আদি নিবাস বার্মার আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা।
বিবৃতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ রাষ্ট্র মিয়ানমারের পুরনো নাম বার্মা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশটির যে রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বসবাস করেন, সেই রাজ্যকে নর্দার্ন রাখাইন স্টেটের পরিবর্তে আদি নাম আরাকান বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আরসা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে এবং সেকারণে তাদের কার্যক্রম বার্মার রাজনৈতিক সীমান্ত এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ডিজিএফআই কর্মকর্তা রিজওয়ান রুশদীকে হত্যার ব্যাপারে আরসা প্রধান ও সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের দায়ী করে যে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে, তা সঠিক নয়।
ঘটনার ওপর অডিও-ভিডিও সংগ্রহ করার কথা জানিয়ে আরসা বলছে, “আমরা পরিষ্কার ভাষায় জানাতে চাই, বাংলাদেশ ও বার্মার (মিয়ানমার) বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলিতে সন্তান জন্মদানের ১১ দিনের মাথায় এক নারী নিহত হয়েছেন এবং অনেকে আহত হয়েছেন।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সীমান্তের শূন্যরেখায় ঘটে যাওয়া ঘটনাসহ শরণার্থী শিবিরে কোনো ঘটনা ঘটলেই নিরীহ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আরসা সদস্য হিসাবে চিহ্নিত করে বিচারবহির্ভূতভাবে আটক করা হয়।
“আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার; পুরো অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়া। বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি সমাধান নিশ্চিত করতে আমাদের (আরসা) সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি,” বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
আরসার বিবৃতির ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অথবা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন।
বেনার প্রতিবেদক বিজিবি মহাপরিচালক ও পরিচালকের (অপারেশন) সাথে ফোনে যোগাযোগ করলেও তাঁদের মন্তব্য পাননি।
বেনারের পক্ষ থেকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তরের পরিচালক লে. কর্নেল আবু হায়দার মোহাম্মদ রাসেলুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
পরিচালক জানান, তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনে পরে মন্তব্য করবেন।
অভিযান চলমান
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ইন্সপেক্টর (মামলা তদন্তকারী) সোহাগ রানা বেনারকে জানান, “কারো বিবৃতির সাথে মামলার কোনো সম্পর্ক নেই। অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলমান রয়েছে। তদন্তাধীন মামলা বিষয়ে এখন কিছু বলা সম্ভব না।”
নো ম্যানস-ল্যান্ডে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা ও মামলার অন্যতম অভিযুক্ত দিল মোহাম্মদ বেনারকে জানান, “সীমান্তে এক সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হত্যা ও র্যাবের এক সদস্যকে আহত করার ঘটনায় মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। তাই এ বিষয়ে এখন কিছু বলা মুশকিল। তবে আমার দাবি, প্রকৃতপক্ষে ঘটনাস্থলে এসে সীমান্তের কাছাকাছি রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের সাথে কথা বললে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।”
তিনি আরো বলেন, “ওই ঘটনায়, গুলিতে সাজেদা বেগম নামে শূন্যরেখার এক রোহিঙ্গা তরুণীসহ সরকারি কর্মকর্তা মারা যাবার বিষয়ে আমরা সবাই মর্মাহত।“
‘আরসা রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করে না’
আরসার দাবির বিপরীতে সাধারণ রোহিঙ্গাদের বলছেন, আরসা একটি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে না।
তাঁদের মতে, আরসার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণেই মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা প্রায় পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্য থেকে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে দিয়েছে।
রোহিঙ্গারা জানান, শরণার্থী শিবিরে প্রায় সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও অপরাধের সাথে আরসা জড়িত। আরসার পক্ষ না নেয়ায় রোহিঙ্গাদের জনপ্রিয় নেতা মুহিব উল্লাহকে হত্যা করা হয়।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটি রাইটস (এআরএসপিএইচ) সদস্য মুহাম্মাদ তৈয়ুব জানান, “আরসা কখনও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপকারে আসবে না। তারা এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য মঙ্গলজনক কিছু করেনি। বরং তাদের (আরসা) কারণে রোহিঙ্গারা নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের দুর্দশার জন্য তারা অনেকাংশে দায়ী। মূলত রোহিঙ্গা নাম ব্যবহার করে তারা (আরসা) বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।”
উল্লেখ্য, ডিজিএফআই এর একজন কর্মকর্তাকে হত্যা ও র্যাবের আরেক সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কমান্ডার-ইন-চিফ আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীসহ ৬৬ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ-মিয়ানমার শূন্যরেখার ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদসহ সেখানকার ১৭ রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়েছে।
গত ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও ডিজিএফআইয়ের বিশেষ একটি দল মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ডিজিএফআই কর্মকর্তা ও বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী এবং এ সময় গুলিবিদ্ধ হন র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সদস্য সোহেল বড়ুয়া। ওই ঘটনায়, গুলিতে সাজেদা বেগম নামে শূন্যরেখার এক রোহিঙ্গা নারী নিহত হন।