অভিজিৎ হত্যার সাজাপ্রাপ্ত আসামি জিয়া-আকরাম দেশে নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

শরীফ খিয়াম
2021.12.21
ঢাকা
অভিজিৎ হত্যার সাজাপ্রাপ্ত আসামি জিয়া-আকরাম দেশে নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের স্থানে ফুল দিয়ে নিহতের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সাধারণ মানুষ। ৬ মার্চ ২০১৫।
[এএফপি]

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক জঙ্গি সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেনের তথ্য চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণার পরদিনই তারা বিদেশে পালিয়ে আছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক অভিজিতের ওই দুই হত্যাকারী বাংলাদেশে আছে বলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে; দেশটির রিওয়ার্ড ফর জাস্টিসের ওয়েবসাইটে এমন তথ্য উল্লেখের পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানালেন।

মানিকগঞ্জে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হয়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) একটি ‘গ্রুপ’ এই হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছিল।”

“জড়িত থাকায় পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এদের মধ্যে পলাতক জিয়া এবং আকরামকে আমরাও খুঁজছি। আমাদের কাছে তথ্য আছে, তারা অন্য কোনো দেশে গা ঢাকা দিয়ে আছে,” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

একইদিন জিয়া ও আকরাম “কোথায় আছে, কোন দেশে আছে, আমরা তা জানি না,” মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, এখন যদি এই পুরস্কার ঘোষণার কারণে তাদের ধরা সম্ভব হয়, “আমরা অবশ্যই সেটাকে স্বাগত জানাব।”

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি সার্ভিসের রিওয়ার্ডস ফর জাস্টিস (আরএফজে) অফিসের মাধ্যমে ওই পুরস্কার দেওয়া হবে বলে সোমবার এক বিবৃতিতে জানায় দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর।

মার্কিন এই উদ্যোগ জিয়া-আকরামকে ধরতে বাংলাদেশের চলমান প্রচেষ্টাকে সহায়তা করবে বলে মনে করেন ড. মোমেন। বাংলাদেশও একইভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তিন পলাতক খুনিকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্র এভাবে পুরস্কার ঘোষণা করে অনেক দেশেই সাফল্য পেয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি শুনেছি, ওসামা বিন লাদেনের ক্ষেত্রেও তারা একইভাবে সফল হয়েছে।” তিনি আরো বলেন, “তাদের (জিয়া-আকরাম) শাস্তি পেতেই হবে।”

অভিজিৎ রায়ের ভাই অনুজিৎ রায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেনারকে বলেন, “আমাদের দাবি হচ্ছে, যে দুই জন পলাতক আছে তারা দেশে বা দেশের বাইরে যেখানেই থাকুক, তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির মুখোমুখি করা হোক।”

“অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হোক, তাঁর পরিবারের সদস্য হিসেবে এটাই আমরা শুরু থেকে চেয়ে আসছি,” জানিয়ে অনুজিৎ বলেন, “রায়টি যাতে সঠিকভাবে কার্যকর হয়, এখন এটাই শুধু আমাদের চাওয়া।

সহসাই কার্যকর হচ্ছে না রায়

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে অভিজিৎকে হত্যা এবং তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে হত্যাচেষ্টার পরদিন রাতে নিহতের বাবা প্রয়াত অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।

চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার রায়ে পাঁচ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড এবং প্ররোচনাকারী ব্লগারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয় ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল। এই আদালতে আসামিদের অন্যতম আইনজীবী ছিলেন এম নজরুল ইসলাম।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে কারাবন্দি আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিলের আবেদন করেছে জানিয়ে মঙ্গলবার তিনি বেনারকে বলেন, “আপিলের আবেদন গৃহীত হওয়ায় ইতিমধ্যে তাঁদের সাজা স্থগিত হয়ে গেছে।”

হাইকোর্টে আপিলের “শুনানির তারিখ পেতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে,” বলে জানান তিনি।

শুধু অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ের বিরুদ্ধে নয়, বরং চলতি বছরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের দেওয়া এলজিবিটি অ্যাক্টিভিস্ট জুলহাজ মান্নান ও খন্দকার মাহবুব তনয় হত্যা মামলা রায় এবং প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার মামলার রায়ের বিরুদ্ধেও দণ্ডপ্রাপ্তরা আপিল করেছেন বলে জানান তিনি।

“আসামিরা আপিল করবে, এটাই স্বাভাবিক বিষয়। তবে আমরা সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছি বলেই তাদের সাজা হয়েছে,” বেনারকে জানান ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) গোলাম ছারোয়ার খান জাকির।

অভিজিৎ হত্যায় জড়িতদের তথ্য চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পুরস্কার ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুরস্কার ঘোষণার ঘটনা আমাদের দেশেও বহুবার ঘটেছে। এটাও হয়তো তেমনই একটি উদ্যোগ। কারণ এক্ষেত্রে নতুন করে তদন্ত করার কিছু নেই।”

তবে রায়ের দিন বেনারের প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী জানিয়েছিলেন, এবিটির (বর্তমান আনসার আল ইসলাম) ‘অপস’ শাখার চারজন অভিজিৎ রায়কে হত্যার উদ্দেশ্যে কোপালেও তাদের মধ্যে মাত্র একজনের সাজা হয়েছে। বাকিদের প্রকৃত নাম-ঠিকানা না পায়নি তদন্তকারীরা।

অভিজিৎ ও বন্যাকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক উল্লেখ করে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তাঁদের ওপর হামলার সাথে জড়িত কারো সম্পর্কে তথ্যের জন্য ৫০ লাখ ডলার পর্যন্ত পুরস্কার অনুমোদন দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পুরস্কারের বিজ্ঞাপনটি সোমবারই নিজের ফেসবুক ওয়ালে প্রকাশ করেছেন বন্যা। তবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী বন্যা এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন সাংবাদিকদের।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।