মিয়ানমার জেল থেকে ফেরা নয় জেলে ১৪ দিনের সঙ্গনিরোধে

আবদুর রহমান
2020.11.25
কক্সবাজার
201125_Bangladeshi_fishermen_returned_620.JPG নাফ নদী দিয়ে মিয়ানমারে আটক নয় জেলে ও তাঁদের ট্রলার নিয়ে টেকনাফে ফিরে আসছেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের প্রতিনিধি দল। ২৫ নভেম্বর ২০২০।
[আবদুর রহমান/বেনারনিউজ]

মিয়ানমার কারাগারে ১৫ দিন থেকে বুধবার দেশে ফেরা কক্সবাজারের নয় জেলেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সতর্কতায় সঙ্গনিরোধে পাঠানো হয়েছে।

তাঁদেরকে ১৪ দিনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গনিরোধে রাখা হবে বলে বেনারকে জানান টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান।

প্রাথমিকভাবে ওই জেলেদের কারো শরীরে করোনার উপসর্গ পাওয়া যায়নি জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ডা. আবদুস সালাম বেনারকে বলেন, “তবে কয়েকজনের সামান্য জ্বর ও কাশি রয়েছে।”

তিনি জানান, জেলেদের সবাইকে টেকনাফের আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) সঙ্গনিরোধে রাখা হবে।

গত ১০ নভেম্বর সকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ওই নয় জেলে একটি ট্রলারে করে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মাছ শিকারে গেলে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) তাঁদের ধরে নিয়ে যায়।

“সাগরে মাছ শিকারের সময় হঠাৎ ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এরপর ভাসতে ভাসতে মিয়ানমার জলসীমায় ঢুকে পড়লে বিজিপি আমাদের ধরে নিয়ে যায়,” বুধবার বেনারকে জানান ফেরত আসা জেলে নুরুল আলম।

মিয়ানমারে নিয়ে যাবার পর প্রথম দিন তাঁদের একটি ফাঁড়িতে রেখে পরের দিন কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয় বলে জানান নুরুল আলম।

ফেরত আসা অন্য জেলেরা হলেন- ইসমাইল ওরফে হেসেন, মো. ইলিয়াছ, মো. ইউনুছ, মোহাম্মদ আলম ওরফে কালু, সাইফুল, সলিম উল্লাহ, নুর কামাল ও মো. লালু মিয়া। তাঁরা সবাই শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) একটি প্রতিনিধি দল বিজিপির সাথে বৈঠক করে আটক হওয়া মাছ ধরার ট্রলারটিসহ বুধবার নয় জেলেকে ফেরত নিয়ে আসে।

বিজিবির প্রচেষ্টায় দেশে ফিরতে পারায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বেনারকে নুরুল আলম জানান, বিজিপিও তাঁদের সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি।

মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা ওই নয় জেলেকে হতদরিদ্র দাবি করে বাংলাদেশি মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বেনারকে বলেন, “১৫টি দিন তারা মিয়ানমারে আটক ছিল। এখন ফিরে আসার পরও কোভিড-১৯ এর কারণে তাদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গনিরোধে থাকতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে তারা প্রায় একমাস কোনো আয় করতে পারবে না।”

“মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারের উচিত তাদের পরিবারগুলোর একমাসের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা। স্থানীয় প্রশাসন চাইলেই কাজটি করতে পারে,” বলেন তিনি।

যেভাবে ফেরত এলেন

বুধবার বেলা এগারোটায় মিয়ানমারের মংডুর ‘এন্ট্রি-এক্সিট পয়েন্টে’ বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটেলিয়নের ও বিজিপির ব্রাঞ্চ-৪ এর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফয়সল হাসান খান ও মিয়ানমারের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিজিপির ব্রাঞ্চ-৪ অধিনায়ক লে.কর্নেল জো লিন অং।

বৈঠক শেষে দুপুর দুইটার দিকে জেলেদের নিয়ে ফিরে আসেন বিজিবি কর্মকর্তারা।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল ফয়সল বলেন, “মাছ শিকারের সময় বাংলাদেশি জেলেদের ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে তাঁরা মিয়ানমারে ঢুকে পড়েন। যে কারণে তাঁরা বিজিপির হাতে আটক হন।”

তিনি জানান, ঘটনার পরপরই বিজিবির পক্ষ থেকে জেলেদের ফেরত চেয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয় মিয়ানমারের কাছে। এরই ধারাবাহিকতায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় জেলেদের হস্তান্তর করতে সম্মত হয় দেশটি।

নূর খান লিটনের মতে, “দুই দেশের সীমান্তে যেহেতু এমন জলসীমা রয়েছে যেখানে জেলেরা মাছ ধরে, এক্ষেত্রে তাদের কেউ যদি কখনো ভুল করে সীমান্ত অতিক্রম করে ফেলে, তাৎক্ষণিক আলোচনার মাধ্যমেই যাতে তাদের ফিরিয়ে আনা যায় সেই ব্যবস্থা থাকা দরকার।”

প্রশাসনের বরাত দিয়ে বেসরকারি সংবাদমাধ্যম সময় টিভির এক সংবাদে জানানো হয়েছে, গত বছর ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ৩২ জন বাংলাদেশি জেলেকে, বিজিবির সাথে বৈঠকের পর তাঁদের ২১ জনকে ফেরত দিয়েছে মিয়ানমার।

হত্যার দায় অস্বীকার বিজিপির

নয় জেলে আটকের দুই দিন আগে ৮ নভেম্বর নাফ নদীতে মাছ শিকারের সময় গুলিবিদ্ধ হন বাংলাদেশি জেলে মো. ইসলাম। পরের দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় কক্সবাজার হাসপাতালে তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে মিয়ানমারের বিজিপির কাছে প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছিল। বৈঠকে ওই ঘটনার ব্যাপারে বিজিপির বক্তব্য প্রসঙ্গে লে. কর্নেল ফয়সল বলেন, “তারা গুলি ছোঁড়ার বিষয়টি অবহিত নয় বলে আমাদের জানিয়েছে।”

“রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) বা অন্য কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে বৈঠকে দাবি করেছেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা,” যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমায় গত বছরও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত এবং আরো চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

ইয়াবা ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকারের নিদের্শনায় গত দুই বছর ধরে নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে।

ঢাকা থেকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন শরীফ খিয়াম।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।