বিজিবি–বিএসএফ বৈঠক: সীমান্ত হত্যা বন্ধের উপায় খোঁজা হচ্ছে
2020.12.22
ঢাকা ও কলকাতা

বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা বন্ধসহ সীমান্ত নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) সাথে আলোচনা শুরু করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের পাঁচ দিনের মাথায় ওই সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি জানানো হলে ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে তাঁর সরকার।
মঙ্গলবার ভারতের আসাম রাজ্যের রাজধানী গুয়াহাটিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের চারদিনের ওই সভা শুরু হয়েছে, যা শেষ হবে ২৬ ডিসেম্বর। এই প্রথমবারের মতো দিল্লীর বাইরে মহাপরিচালক পর্যায়ের এমন সভা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিএসএফ।
সভায় ১১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম ও বিএসএফ’র নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা। পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠক শুরুর কথা জানিয়েছে বিজিবি ও বিএসএফ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যপত্র অনুযায়ী, সভার বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে, সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের আহত বা হত্যা করা সম্পর্কে আলোচনা, এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে করণীয় ঠিক করা ও ভারত থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা, হেরোইনসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ মাদকদ্রব্যের চোরাচালান রোধ করা।
দুই দেশের মাদক পাচারকারীদের সম্পর্কে তথ্য বিনিময় নিয়ে আলোচনা ছাড়াও ভারত থেকে বাংলাদেশে অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালান রোধে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে বৈঠকে তথ্য বিনিময় করবে বিজিবি-বিএসএফ।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের প্রায় চার হাজার ১০০ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত রয়েছে। বাংলাদেশের আরেক প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত ২৭১ কিলোমিটার।
বন্ধ হবে না সীমান্ত হত্যা?
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা আমি দেখি না। এর বহুবিধ কারণ আছে।”
নরেন্দ্র মোদিসহ অতীতে অনেক ভারতীয় রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে বলে আশ্বস্ত করলেও তা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “এর অন্যতম কারণ হলো, রাজনৈতিক নেতারা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে এমন নির্দেশনা দেন না যে, কোনো অবস্থাতেই গুলি করা যাবে না।”
“বলা হয়, অবস্থা যদি গুলি করার মতো হয়, তাহলে গুলি করা যাবে। সীমান্ত যাঁরা টহল দেন তাঁরা এমন বার্তাই পেয়ে থাকেন,” যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “সুতরাং, যত সভা করা হোক না কেন, যত বড় বড় বিবৃতি দেয়া হোক না কেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা খুব কঠিন।”
“ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সহিংসতা কমানোর বিষয়টিই গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা দরকার,” মন্তব্য করে সীমান্ত অঞ্চলে কাজ করা ভারতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিরীটি রায় বেনারকে বলেন, “দুই দেশের মানুষের এটাই দাবি, তাঁরা চান সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক।”
তাঁর মতে, “সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে হিংসাত্মক সীমান্ত হলো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। দুর্ভাগ্যজনক হলো, প্রতিদিন বিএসএফের হাতে মানুষ মারা যাচ্ছে। সীমান্তবাসী মানুষদের ওপর নানা অছিলায় নির্যাতন চলছে।”
“সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা তদন্তে প্রমাণ হয়েছে, বিএসএফের কিছু সদস্য চোরাচালান ও গরু পাচারেও যুক্ত রয়েছে। তাই বিএসএফের সর্বস্তরে সংশোধন জরুরি” বলেন কিরীটি রায়।
প্রসঙ্গত, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু পাচার চক্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত নভেম্বরে বিএসএফ-এর কমান্ড্যান্ট পদমর্যাদার কর্মকর্তা সতীশ কুমারকে গ্রেপ্তার করে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই।
ভারতীয় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রায়ই বাংলাদেশিরা প্রাণ হারান। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে, এ বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ৪১ জন বাংলাদেশি বিএসএফ’র হাতে নিহত হয়েছেন।
সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও কালো পতাকা প্রদর্শন করেছে প্রধান বিরোধীদল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো।
এই হত্যা বন্ধে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তোলেন দলটির নেতারা।