ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতন: হাইকোর্টের নির্দেশে ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ জন বহিষ্কার
2023.03.01
ঢাকা
এক ছাত্রীকে নির্যাতনে জড়িত থাকার ঘটনায় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের এক নেত্রীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্রাবাসের প্রভোস্ট শামসুল আলমকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ছাত্রী নির্যাতনের এই ঘটনায় দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ কয়েক দফা নির্দেশসহ এই আদেশ দেয়।
আদালত ইবি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে বলেছে, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ফুলপরী খাতুন নামে ওই ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ ছাত্রীকে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হোক।
নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত অপর ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন; ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, চারুকলা বিভাগের হালিমা খাতুন ঊর্মি ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মোয়াবিয়া ইসলাম।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসীন, রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
“ইবি শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ ছাত্রীকে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার এবং ওই হলের প্রভোস্ট শামসুল আলমকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন,” সাংবাদিকদের জানান আইনজীবী গাজী মো. মহসীন।
তিনি জানান, ফুলপরী খাতুনকে তিন দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে তাঁর পছন্দমতো হলে সিট বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি ফুলপরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কুষ্টিয়া ও পাবনার পুলিশ সুপারসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আদালত ঘটনার সাক্ষীদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে।
আইনজীবী জানান, “ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনায় শিক্ষার্থী হালিমার মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওটি উদ্ধার করে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত আগামী ৮ মের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে। সেদিন প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য তারিখ রেখেছেন আদালত,” বলেন গাজী মো. মহসীন।
র্যাগিং ফৌজদারি অপরাধ
রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসীন জানান, হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেন, র্যাগিং ফৌজদারি অপরাধ। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করায় সুস্থ শিক্ষার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এই পরিস্থিতিকে দুঃখজনক হিসেবে ব্যাখ্যা আদালত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং বন্ধের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে বলেও জানান এই আইনজীবী।
১২ ফেব্রুয়ারি রাতে নির্যাতন প্রসঙ্গে নিজের নাম ও ছবি প্রকাশ করার অনুমতি দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে কথা বলেছেন নির্যাতনের শিকার ফুলপরী। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটিতে নিজের বক্তব্য দেন।
ওই রাতে ইবি’র দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ডেকে রাত ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত সানজিদা নেতৃত্বে আরও কয়েকজন সহযোগী নবীন ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে মারধর ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন।
“নির্যাতনকারীরা ফুলপরীকে নগ্ন করে ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়। ফুলপরী বার বার ক্ষমা চেয়েও ছাড় পায়নি, বরং তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছেড়ে দিতে হুমকি দেয়া হয়েছিল,” জানান গাজী মো. মহসীন।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক হলেও আদালতের এমন নির্দেশনাকে বিরল বলছেন শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোহাম্মদ কায়কোবাদ।
তিনি বেনারকে বলেন, “বিচারহীনতা অন্যায়কে উৎসাহিত করে তাই দোষীদের বিচার হওয়া উচিত। বিচার দৃষ্টান্তমূলক হওয়া উচিত।”
প্রভোস্টকে প্রত্যাহার, ৫ ছাত্রী বহিষ্কার
বুধবার সকালে আদালতের নির্দেশনার পর বিকেলেই ইবি’র হল প্রভোস্ট শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান গণমাধ্যমকে এই খবর নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক ডেকেই আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনায় সংগঠনের অভিযুক্ত পাঁচ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বুধবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁদের বহিষ্কারের কথা জানান ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ।
ছাত্রলীগ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়—এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে।