চীনা ঋণে চারটি বড়ো জাহাজ কিনবে বাংলাদেশ
2023.04.21
ঢাকা

চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চারটি বড়ো জাহাজ সংগ্রহ করছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)।
এই প্রকল্পের আওতায় বড়ো দুটি তেল পরিবহনকারী জাহাজ (মাদার ওয়েল ট্যাংকার) ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়লা, সিমেন্ট ক্লিঙ্কার ও গমের মতো জিনিস আমদানির জন্য বড়ো দুটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার সংগ্রহ করা হচ্ছে।
বিএসসি বলছে, এই প্রথমবারের মতো চারটি বড়ো জাহাজ পেতে যাচ্ছে শিপিং কর্পোরেশন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি প্রায় দুই হাজার ৬২১ কোটি টাকা ব্যয় সংবলিত প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি বেনারকে নিশ্চিত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বেনারের হাতে আসা প্রকল্প বিষয়ক দলিল অনুযায়ী, পুরো ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ২৩৬ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ দুই হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা দেবে চীন সরকার। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের মার্চ।
তবে চীনা ঋণের শর্ত এবং সুদের হার সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।
প্রকল্পের বিবরণে বলা হয়েছে, দেশে অপরিশোধিত তেল আমদানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমদানি করা পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল সুষ্ঠুভাবে ও কম সময়ে খালাস করতে একটি ডবল লাইন সম্পন্ন সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এই প্রকল্পের ডবল পাইপ লাইনটি সাগর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে পরিশোধনাগার পর্যন্ত বিস্তৃত।
কাগজপত্রে বলা হয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বঙ্গোপসাগর থেকে সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে মাদার ট্যাংকার থেকে অপরিশোধিত এবং পরিশোধিত তেল ইস্টার্ন রিফাইনারির ডিপোতে স্থানান্তর করা সম্ভব। আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পটির শতকরা ৯৬ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় দুটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার সংগ্রহের মাধ্যমে কয়লা, সিমেন্ট ক্লিঙ্কার, গমসহ অন্যান্য পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন উৎস থেকে বাংলাদেশে পরিবহন করা সম্ভব হবে।
আমদানিতে ‘বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে’
বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
আমদানি করা পণ্য নিয়ে আসা বড়ো জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে আসতে পারে না। কারণ বন্দরের জেটির কাছে কর্ণফুলী নদীর গভীরতা কম। সেকারণে বড়ো জাহাজগুলো বন্দর থেকে কমপক্ষে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করে।
সেখান থেকে লাইটার হিসাবে পরিচিত ছোট জাহাজে মালামাল ভর্তি করে বন্দরে নোঙর করা হয়। ফলে খরচ বেড়ে যায়। সময় লাগে বেশি।
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডোর মো. জিয়াউল হক শুক্রবার বেনারকে বলেন, বাংলাদেশে শিপিং কর্পোরেশনের নিজস্ব কোনো মাদার ওয়েল ট্যাংকার এবং মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার নেই।
সেকারণে তেল আমদানির ক্ষেত্রে বিদেশি মাদার অয়েল ট্যাংকারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে আনতে হয়।
তিনি বলেন, এই মাদার ট্যাংকারগুলো কুতুবদিয়া দ্বীপে নোঙর করে। সেখান থেকে আমাদের দুটি লাইটার ওয়েল ট্যাংকারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে পরিশোধনাগারে আনা হয়।
কমোডোর জিয়াউল হক বলেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে মাদার অয়েল ট্যাংকার থেকে সরাসরি দ্রুত ক্রড অয়েল পরিশোধনাগারে আনতে ডবল পাইপলাইন স্থাপনের একটি প্রকল্প চলমান। এই প্রকল্প চালু হলে মাদার ট্যাংকার থেকে ক্রুড অয়েল দ্রুত পরিশোধনাগারে সরবরাহ করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, “একটি বিদেশি মাদার ক্রুড ওয়েল ট্যাংকার ভাড়া করতে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ লাখ ডলার দিতে হয়। আমাদের নিজস্ব মাদার ক্রুড অয়েল ট্যাংকার থাকলে সেই বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এবং জ্বালানি, আমদানি, সরবরাহ সবকিছুই গতি পাবে।”
কমোডোর জিয়াউল হক বলেন, “বর্তমানে আমাদের দুটি অয়েল লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে। চীন থেকে জাহাজগুলো পাওয়া গেলে আমরা ডেনমার্কে নির্মিত পুরানো অয়েল লাইটারেজ জাহাজ দুটি ডিকমিশনড (ব্যবহার অযোগ্য ঘোষণা) করব।”
বর্তমানে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মোট সাতটি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ডেনমার্কে নির্মিত দুটি অয়েল লাইটারেজ জাহাজ ছাড়া পাঁচটিই ২০১৮ সালে চীনে নির্মিত।
চীনে নির্মিত আরেকটি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে আক্রমণের শিকার হয়। ওই আক্রমণে বাংলাদেশি নাবিক হাদিসুর রহমান প্রাণ হারান। আক্রমণের সময় বন্দরটি রাশিয়ার দখলে থাকলেও এই আক্রমণের জন্য তারা ইউক্রেনকে দায়ী করে আসছে। অন্যদিকে ইউক্রেনও এই আক্রমণের দায় অস্বীকার করেছে।
জাহাজটি সেখানেই পরিত্যক্ত হয়। তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ওই জাহাজের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন।