আইনি জটিলতা না কাটলেও চীনা অনুদানে নির্মিত এক্সিভিশন সেন্টার উদ্বোধন
2021.10.21
ঢাকা
আইনি জটিলতা শেষ করে মালিকানা হস্তান্তর করার আগেই বৃহস্পতিবার পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্প এলাকায় চীনের আর্থিক অনুদানে নির্মিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার স্থায়ী ভেন্যু বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে অনলাইনে এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বকশি।
সংবাদ সংস্থা বাসস জানায়, এই কেন্দ্র উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রপ্তানি মেলা, বাণিজ্য মেলা, রপ্তানিকারকদের সম্মেলন, ক্রেতা-বিক্রেতা মেলা এবং অন্যান্য বাণিজ্য বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ড আয়োজনের মাধ্যমে কেন্দ্রটির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
ঢাকা শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার উত্তরপূর্ব দূরে অবস্থিত পূর্বাচল শহর এলাকায় নির্মিত এই কেন্দ্রের মেঝের আয়তন ৩৩ হাজার বর্গমিটার। আগামী বছর থেকে এই কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জনসংযোগ কর্মকর্তা লতিফ বকশি।
আইনি জটিলতা
তবে “পূর্বাচল প্রকল্প নিয়ে পরিবেশবাদীদের মামলার প্রেক্ষিতে আমরা বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টারটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কাছে হস্তান্তর করতে পারছি না,” বৃহস্পতিবার বেনারকে জানান পূর্বাচল টাউনশিপ প্রকল্পের পরিচালক উজ্জ্বল মল্লিক।
তিনি বলেন, “এই সেন্টারটি হস্তান্তর করতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করা দরকার। সেকারণে আমাদের পঞ্চম ভূমি ব্যবহার নীতির ব্যাপারে আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছে এর বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করার প্রক্রিয়ায় রয়েছি।”
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নগর উন্নয়ন সংস্থা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ১৯৯৫ সালে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার বনাঞ্চল ও নিচু ভূমিতে দেশের প্রথম স্মার্ট শহর পূর্বাচল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়।
এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো ক্রমবর্ধমান ঢাকা শহরের ওপর থেকে মানুষের চাপ কমানো।
রাজউক ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর পাশে ছয় হাজার ১৫০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে এই পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্প যা রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র সাত কিলোমিটারের মতো দূরে অবস্থিত।
এই প্রকল্পের মোট ভূমির মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলাধীন চার হাজার ৫০০ একর এলাকায় ২০০২-০৩ সালে কাজ শুরু হয়। গাজীপুর জেলার অংশে কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে।
এই কাজ চলাকালে ২০০৪ সালে প্রথম, ২০০৫ সালে দ্বিতীয়, ২০০৯ সালে তৃতীয় এবং ২০১৩ সালে চতুর্থ বার এর পরিকল্পনা পরিবর্তন করে রাজউক।
পরিবেশবাদীদের মতে, রাজউক প্রতিবারই সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং নিম্নপ্লাবণ ভূমি এই প্রকল্পের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে যা ২০০০ সালের জলাভূমি সংরক্ষণ আইন ও বন আইনের পরিপন্থী।
এই বিবেচনায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলার) নেতৃত্বে আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ মোট সাত বেসরকারি সংগঠন ২০১৩ সালে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থ বিষয়ক রিট পিটিশন দায়ের করে বলে বেনারকে জানান আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আদালত রাজউকের চতুর্থ সংশোধন পরিকল্পনা অনুমোদন করে জানায় আদালতের অনুমতি ছাড়া ওই প্রকল্পের আওতায় কোনো বনাঞ্চল, হ্রদ, খাল, নগরের সবুজ এলাকা, উদ্যান, খেলার মাঠ ইত্যাদি পরিবর্তন করা যাবে না।
তবে ২০১৭ সালে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পের ভূমি ব্যবহার সংক্রান্ত নীতির পঞ্চম সংশোধনী এনে আদালতের অনুমতি প্রার্থনা করে। এর বিরোধিতা করে বেসরকারি সংগঠনগুলো।
২০১৯ সালে আদালত এক আদেশে পঞ্চম সংশোধনী গ্রহণ না করে জানায়, কেবলমাত্র নতুনভাবে প্রস্তাবিত আইকনিক টাওয়ার নির্মাণ করা যাবে। এ ছাড়া, অন্য কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না অথবা কোনো অবকাঠামো বড়ো করা যাবে না।
আইনজীবীদের মতে, আদালতের অনুমতি ছাড়া পঞ্চম সংশোধনী বাস্তবায়ন করা যাবে না।
পঞ্চম সংশোধনীতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টারের মূল আয়তন ১০ একর থেকে ২৬ একর করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান উজ্জ্বল মল্লিক।
তিনি বলেন, চীনারা এই প্রদর্শনী কেন্দ্রের পরিসর বড়ো করতে চায়।
প্রকল্পটি আরো বড়ো করার পরিকল্পনা
পূর্বাচল প্রকল্প নিয়ে “আইনি জটিলতা” থাকলেও এক্সিভিশন সেন্টার নির্মাণের ব্যাপারে “কোনো জটিলতা” না থাকায় এর নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে বলে বেনারকে জানান বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
এক্সিভিশন সেন্টারটি নির্মাণ প্রকল্পের বাজেট ১,৩০৩ কোটি টাকা হলেও এর মধ্যে ৮১৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান তিনি, যার মধ্যে ৫২৫ কোটি টাকার বেশি চীন সরকার অনুদান হিসাবে দিয়েছে।
ভবিষ্যতে এই প্রকল্পটি আরো বড়ো করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান রেজাউল করিম।
এই প্রকল্প নিয়ে চীনা সরকারের মন্তব্য জানতে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসে অনুরোধ করা হলেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের অবকাঠামো বিশেষ করে সড়ক, রেল, সেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি নির্মাণে সবচেয়ে বড়ো অংশীদার চীন। বাংলাদেশ চীনা সরকারের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দিয়েছে। এই উদ্যোগের আওতায় চীন সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।
এছাড়াও, চীনা কোম্পানিগুলো পদ্মা সেতুসহ বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূর্বাচলে নবনির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র উদ্বোধনকালে আশা প্রকাশ করেন, রপ্তানি মেলা, বাণিজ্য মেলা, রপ্তানিকারকদের সম্মেলন, ক্রেতা-বিক্রেতা মেলা এবং অন্যান্য বাণিজ্য বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ড আয়োজনের মাধ্যমে কেন্দ্রটির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, মহামারির কারণে উন্নয়নের গতি কিছুটা কমে গেলেও দেশ থেমে থাকেনি, এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।