বাংলাদেশে নকল সেলাই মেশিন বিক্রি, গ্রেপ্তার দুই চীনা নাগরিক

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.12.23
ঢাকা
বাংলাদেশে নকল সেলাই মেশিন বিক্রি, গ্রেপ্তার দুই চীনা নাগরিক সিঙ্গার ও বাটারফ্লাই ব্র্যান্ডের নকল সেলাই মেশিন বিক্রির দায়ে আটকের পর ঢাকায় সিআইডি কর্মকর্তাদের সাথে দুই চীনা নাগরিক হাও জিয়াওপিং ও সু ইন।
[সৌজন্যে সিআইডি]

বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত সিঙ্গার ও বাটারফ্লাই ব্র্যান্ডের নকল সেলাই মেশিন বিক্রির দায়ে দুই চীনা নাগরিককে আটক করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। 

আটক দুই চীনা নাগরিকের নাম হাও জিয়াওপিং (৪১) ওরফে বব হাও এবং সু ইন (৩৫)। বুধবার বেনারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিআইডি মুখপাত্র জিসানুল হক। 

বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো নকল সেলাই মেশিন বিক্রির দায়ে কোনো চীনা নাগরিক আটক হলেন। এর আগে এ বছর মার্চে মদ ও বিয়ার বিক্রির দায়ে মংলা বন্দর এলাকা থেকে পাঁচ চীনা নাগরিককে আটক করেছিল কোস্ট গার্ড।

সিআইডি মুখপাত্র জানান, মঙ্গলবার বিকালে তাঁদের আটক করা হয়। তুরাগ থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ওই ‍দুইজনকে বুধবার ঢাকার বিচারিক আদালতে নেয়া হলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাঁদের কারাগারে পাঠান বিচারক। মামলার তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিলে তাঁদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। 

জিসানুল হক বলেন, আটকদের দেয়া তথ্য অনুসারে তুরাগ থানাধীন এলাকার একটি গুদাম ঘরে অভিযান চালিয়ে চীন থেকে আনা নিম্নমানের ১ হাজার ৬৮৫টি সেলাই মেশিন উদ্ধার করেছে সিআইডি। এগুলোর মূল্য ৭০ লাখ টাকার বেশি। 

দেশীয় কিছু অসাধু ব্যক্তির সহায়তায় ওইসব মেশিনে সিঙ্গার ও বাটারফ্লাই মনোগ্রাম ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করতেন আটক দুই চীনা নাগরিক। মেশিনগুলো এমনভাবে তৈরি করা হতো যে সাধারণ মানুষের পক্ষে আসল বা নকল বোঝা সম্ভব নয়। 

জিসানুল হক বলেন, ওই দুই চীনা নাগরিক পর্যটক ভিসায় বাংলাদেশে আসতেন। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কন্টেইনারে নিম্নমানের সেলাই মেশিন আনতেন। এভাবে তাঁরা গত দুই বছর এমন ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। 

তিনি বলেন, আসল সিঙ্গার মেশিনের দাম চার হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু আটক চীনারা নিম্নমানের সিঙ্গার ও বাটারফ্লাই সেলাই মেশিন তিন হাজার ৮০০ টাকায় দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতেন। কম দামের এসব মেশিন কয়েক মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে যেত। 

মেরামত করার জন্য সিঙ্গার কাস্টমার কেয়ারে নিয়ে গেলে ক্রেতারা জানতেন মেশিনগুলো নকল। সিঙ্গার কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। 

জিসানুল হক বলেন, “আমাদের ধারণা আরও কিছু চীনা নাগরিক এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছেন। এ ছাড়া, তাঁদের দেশীয় সহযোগীদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।” 

বাংলাদেশের সেলাই মেশিনের বার্ষিক বাজার কমপক্ষে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায়। 

সিঙ্গার বাংলাদেশের ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯০৫ সাল থেকে বাংলাদেশ অঞ্চলে সেলাই মেশিনের ব্যবসা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। গুণগত মানের কারণে বাংলাদেশে সিঙ্গার সেলাই মেশিন ও বাটারফ্লাই ব্যাপক জনপ্রিয় নাম। 

বর্তমানে চীন থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সেলাইমেশিন আমদানি করা হয়। এই মেশিনের ব্যাপক চাহিদার অন্যতম কারণ হলো, দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র দূর করতে সরকার গ্রামীণ নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করে আসছে। এই মেশিন দিয়ে জীবনযাপন করেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। 

ভোক্তা অধিকার সমিতি কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বেনারকে বলেন, “সেলাই মেশিন ধনী–দরিদ্র নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের জন্য দরকারি। সেলাই মেশিন কেন, যেকোনো নকল সামগ্রী বিক্রি করা গর্হিত অপরাধ। এগুলো ভোক্তা অধিকার ক্ষুণ্ণ করে। সরকারের উচিত এ ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নেয়া।” 

তিনি বলেন, “এই দুই চীনা নাগরিকসহ বাংলাদেশের যেসব নাগরিক নকল পণ্য বিক্রির সাথে যুক্ত তাঁদের আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।