জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশি সেনাপ্রধানের বৈঠক

জন ব্যাকটেল
2021.02.09
ওয়াশিংটন ডিসি
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশি সেনাপ্রধানের বৈঠক আইভরি কোস্টে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে কর্মরত বাংলাদেশি সেনাসদস্যদের টহল। ২৪ মার্চ ২০০৫।
[রয়টার্স]

আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১। ইস্টার্ন সময় বিকেল ০৩:১৫

বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ও তাঁর ভাইদের বিরুদ্ধে আল জাজিরার সাম্প্রতিক তথ্যচিত্রে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগগুলো জাতিসংঘ তদন্তের দাবি জানালেও মঙ্গলবার সংস্থাটির সদরদপ্তরে শান্তিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে জেনারেল আজিজ আহমেদ বৈঠক করেছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক মুখপাত্র।

জানুয়ারির শেষ দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের সেনাপ্রধান গত সপ্তায় দেশটির সেনাপ্রধানসহ জ্যৈষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে বিভিন্ন বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন।

মঙ্গলবার তিনি নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফর পিস অপারেশনস এর সাথে বৈঠক করেছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন জাতিসংঘ সদরদপ্তরের এক মুখপাত্র।

“জাতিসংঘে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত বৈঠকের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকেলে শান্তিরক্ষা মিশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফর পিস অপারেশনস জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়া বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সাথে বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশের অনুরোধে এই ভার্চুয়াল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়,” জানান জাতিসংঘের মুখপাত্র।

তিনি জানান, বৈঠকে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশের অবদান ও শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের উদ্যোগ বিষয়েও আলোচনা হয়।

সম্প্রতি মালিতে ইসলামি উগ্রবাদীদের হামলায় নিহত বাংলাদেশি বাহিনীর সদস্যসহ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত অবস্থায় নিহত ও আহত বাংলাদেশি সৈনিকদের প্রতি জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়া শ্রদ্ধা জানান বলেও উল্লেখ করেন জাতিসংঘের মুখপাত্র।

সেনাপ্রধানের এই বৈঠকগুলোতে “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে,” গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে এর আগে এক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশের সদস্য সংখ্যাই সবচে বেশি। 

তবে গত ১ ফেব্রুয়ারি কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ইসরায়েল থেকে মোবাইল ফোন নজরদারি সরঞ্জাম কেনাসহ আরো কিছু দুর্নীতিতে বাংলাদেশি সেনাপ্রধানের সম্পৃক্ততা বিষয়ে অভিযোগগুলো গত বৃহস্পতিবার তদন্তের আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।

আল জাজিরার তথ্যচিত্রের অভিযোগ করা হয়, ইসরাইলের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য নিষিদ্ধ হলেও সামরিক বাহিনীর জন্য ইসরাইলে নির্মিত সেলফোন নজরদারির প্রযুক্তি কেনা হয়েছে। ওই সব যন্ত্রপাতি দিয়ে এক সাথে কয়েক শ মোবাইল ফোন নজরদারি করা সম্ভব।

এতে বলা হয়, ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং সেনাপ্রধানের ভাই হারিস আহমেদ এই সরবরাহ প্রক্রিয়ায় মূল ব্যক্তি ছিলেন।

এই অভিযোগ অস্বীকার করে এক বিবৃতিতে আইএসপিআর জানায় ওই সরঞ্জামগুলো মূলত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যবহারের জন্য হাঙ্গেরির একটি কোম্পানি থেকে কেনা হয়েছিল। সরঞ্জামগুলোর কোনো নথিপত্রেই ওগুলো ইসরায়েলের তৈরি বলে উল্লেখ নেই। 

বাংলাদেশের এই বিবৃতির পর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশি সদস্যদের ওরকম কোনো সরঞ্জাম ব্যবহারের কথা নয় এবং তাঁদেরকে ওরকম কোনো সরঞ্জাম সরবরাহও করা হয়নি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আল জাজিরার “দুর্নীতির অভিযোগগুলো গুরুতর, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এগুলো তদন্ত করা।” 

জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বাংলাদেশি সেনাপ্রধানের সাথে মঙ্গলবারের বৈঠকের আলোচনাতেও “গণমাধ্যমে উত্থাপিত সাম্প্রতিক অভিযোগগুলো” উঠে আসে বলে বেনারকে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। 

এদিকে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশি সদস্যদের কারো মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো অতীত রেকর্ড আছে কি না তা যাচাই না করা পর্যন্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি বিষয়ক আলোচনা স্থগিত করার জন্য সম্প্রতি এক যৌথ বিবৃতিতে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ সাতটি মানবাধিকার সংস্থা।

সংগঠনগুলো জানায়, আল জাজিরার প্রতিবেদনে গোপনে ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখানো হয়, সেনাপ্রধানের এক ভাই বলছেন, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ (র‍্যাব) নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের অভিজাত বাহিনী র‍্যাবের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই বিচারবহির্ভূত হত্যা, নাগরিকদের গুম করা ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। র‍্যাবের অনেক সদস্যই সেনাবাহিনী থেকে আসেন।

“দেশটির সেনাবাহিনী সম্পর্কে জাতিসংঘের সার্বিক পর্যালোচনার ফলাফল, ও তাদের সাথে জাতিসংঘের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশি সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি বিষয়ক আলোচনা স্থগিত করা উচিত,” বিবৃতিতে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

“জাতিসংঘের উচিত এমন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করা, যাতে তারা বলতে পারে যে, র‍্যাব থেকে যেসকল সদস্য আসছেন তাঁরা কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে যুক্ত নন,” সোমবার বেনারকে বলেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস।

তিনি বলেন, “আল জাজিরার অভিযোগগুলো বাংলাদেশের তদন্ত করা উচিত বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। কিন্তু আমরা বলেছি, ‘না, জাতিসংঘেরই উচিত ওই অভিযোগগুলো তদন্ত করা।’ শান্তিরক্ষা বাহিনীর কোনো সদস্য কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটাননি, এটা নিশ্চিত করা জাতিসংঘের দায়িত্ব”

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট মাইকেল কুগেলম্যান বেনারকে বলেন, “বর্তমানে কর্মরত বাংলাদেশি কোনো শান্তিরক্ষা বাহিনীর যদি অপরাধের সাথে যুক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তাদেরকে নিষিদ্ধ করতে হবে।”

সফর শেষে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সেনাপ্রধান দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ওয়াশিংটন থেকে ইমরান ভিটাচি।

আপডেট: প্রতিবেদনে জাতিসংঘ মুখপাত্রের উদ্ধৃতি যোগ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।