কুয়েতে দণ্ডিত পাপুলের নথিপত্র ঢাকায়, সংসদ সদস্যপদ বাতিল হতে পারে

জেসমিন পাপড়ি
2021.02.19
ঢাকা
কুয়েতে দণ্ডিত পাপুলের নথিপত্র ঢাকায়, সংসদ সদস্যপদ বাতিল হতে পারে অর্থ ও মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে দণ্ডিত বাংলাদেশি সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। ফাইল ছবি।
[ফোকাস বাংলা]

অর্থ ও মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে সাজাপ্রাপ্ত সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার, এর ফলে তিনি সংসদ সদস্যপদ হারাতে পারেন। 

প্রায় তিন সপ্তাহ আগে কুয়েতের আদালতে পাপুলের সাজার নথিপত্র সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস। 

“কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তথ‍্যপ্রমাণ আসার পর আমরা বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি জাতীয় সংসদকে অবহিত করবে,” শুক্রবার বেনারকে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। 

“সংবিধান অনুযায়ী দণ্ডিত ওই সাংসদ আর নিজ পদে থাকতে পারবেন না। সাংসদ পাপুলের রেকর্ড সংসদের কাছে পৌঁছুলে স্পিকার তাঁর পদ শূন্য ঘোষণা করবেন,” বেনারকে জানান সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। 

এদিকে কুয়েতি আদালতের রায়ের কপি সংসদে পৌঁছেছে বলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। রায় পর্যালোচনা করে সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সাংসদ পাপুলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্পিকার। 

কুয়েতের আদালতের রায়টি আরবি এবং ইংরেজি ভাষায় ৬১ পৃষ্ঠা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তিনি (পাপুল) সাংসদ হিসেবে কুয়েতে যাননি, গিয়েছিলেন ব্যবসায়ী হিসেবে। সেখানে তাঁর মামলা তিনি চালিয়েছেন। কখনো এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা চাননি।” 

মানব ও মুদ্রা পাচারের মামলায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ মো. শহিদ ইসলাম পাপুলকে গত ২৮ জানুয়ারি সাজা দেয় কুয়েতের ফৌজদারি আদালত। রায়ে তাঁকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার বা ৫৩ কোটি ১৯ লাখ টাকার বেশি জরিমানা করা হয়।

বিদেশের মাটিতে এটিই বাংলাদেশি কোনো সাংসদের ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার প্রথম ঘটনা। 

এর আগে পাপুলকে গত ৬ জুন কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। 

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতে মামলা হয়। গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে ১৭ দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। 

পরে দেশটির পাবলিক প্রসিকিউশন তদন্ত শেষে পাপুলসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, মানবপাচার, ঘুষ লেনদেন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ভঙ্গের অভিযোগ আনে। আদালতে বিচার শুরু হয় গত ১৭ সেপ্টেম্বর। 

কুয়েতি গণমাধ্যম আল-কাবাস জানায়, ২৮ জানুয়ারির রায়ে পাপুলের কাজে সহায়তাকারী হিসেবে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জারাহসহ কুয়েতি আরো দুই কর্মকর্তাকেও চার বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ওই দুইজন পাপুলের বিভিন্ন কাজের মধ্যস্থতাকারী ছিলেন। 

বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে তিনি আর সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য থাকেন না। এছাড়া সাজা ভোগ শেষে মুক্তি পাওয়ার পরেও পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না। 

তবে সংবিধান অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হবে কি না, সে সম্পর্কে বিতর্ক দেখা দিলে শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য বিষয়টি সংসদ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে ধরা হয়। 

শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গেলেও মানব পাচার ও ভিসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন পাপুল। তাঁর মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানি পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেওয়ার কাজ করে। এর বাইরেও সেদেশে তাঁর অন্যান্য ব্যবসা এবং সেখানে বসবাসের অনুমতি রয়েছে। 

২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পাপুল। তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলামও সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ। 

পাপুলের গ্রেপ্তারের পরদিন তাঁর স্ত্রী সাংসদ সেলিনা ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, কুয়েতে মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানিতে ২৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন। 

কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেশে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের পৃথক দুই মামলায় সাংসদ পাপুলসহ ৬ জনের ৬৭০টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় ঢাকার আদালত।

মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে সাংসদ পাপুল, তাঁর মেয়ে, ভাই ও শ্যালিকাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর মামলা করে সিআইডি।

এর আগে ১১ নভেম্বর মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে পাপুল ও তাঁর স্ত্রী সেলিনার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।