এস আলম গ্রুপের সম্পদ বিক্রি করে দায় মেটানো হবে: গভর্নর
2024.08.28
ঢাকা
প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দেশের সর্ববৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের দায় মেটানো হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক খাতে যে বড়ো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে তার অংশ হিসেবে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ ঘোষণা দেন।
ব্যাংকে বন্ধক নেই-এমন সম্পত্তি এস আলম গ্রুপ বিক্রির চেষ্টা করছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এই গ্রুপের সম্পদ যেন কেউ না কেনে। এ সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।”
ইতিহাসের বৃহত্তম ব্যাংক ডাকাতি হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-ভিত্তিক এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা (১৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে এস আলমের নামে এবং বেনামি মালিকানায় থাকা সম্পদ বিক্রি করা হবে বলে জানান তিনি। তবে আমানতকারীদের সংখ্যা এবং টাকার পরিমাণ সম্পর্কে কোনো ধারণা দেননি গভর্নর।
এস আলম গ্রুপের সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের দায় মেটানোর সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবায়নযোগ্য সে বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বেনারকে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত অবস্তবায়নযোগ্য এমন নয়।”
তবে তাঁর মতে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে এস আলম গ্রুপের “সম্পদের পরিমাণ ও গ্রাহক বা আমানতকারীদের প্রাপ্তির পরিমাণ ভালোভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।”
তিনি বলেন, “এই মূল্যায়নটা সব ধরনের প্রভাবমুক্ত রাখতে একটি স্বতন্ত্র অডিট ফার্মের মাধ্যমে করা প্রয়োজন। কারণ এই ধরনের প্রতিষ্ঠান সাধারণত সম্পদের মূল্য বেশি দেখিয়ে ঋণ নিয়ে থাকে, আবার ঋণ নিয়ে সেই টাকা পাচার করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।”
সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে “প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে” এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সফল হতে পারে বলে মনে করেন সেলিম রায়হান।
উল্লেখ্য, বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদ (এস. আলম) বাংলাদেশের আলোচিত বৃহত্তম শিল্প গ্রুপ ‘এস.আলম’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার।
আওয়ামী লীগ সরকারের সুরক্ষায় থেকে দেশের সাতটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ এবং এই ব্যাংকগুলো থেকে তুলে নেয়া বিপুল অঙ্কের টাকার বেশিরভাগই পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এস আলম গ্রুপের ১২টি প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির তদন্তে নেমেছে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি এস আলম এবং তার সহযোগীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার পাশাপাশি ছয়টি ব্যাংকের শেয়ার জব্দ করেছে। এছাড়া ব্যাংক ছয়টি ব্যাংকের বোর্ডও পুনর্গঠন করেছে, যার মধ্যে চারটি সরাসরি এবং বাকি দুটি পরোক্ষভাবে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এস আলম গ্রুপের নামে–বেনামে থাকা সব ঋণ ও ঋণসুবিধা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি তাদের নামে-বেনামে কোনো আমানত থাকলে তাও উত্তোলন করতে পারবে না গ্রুপটি। এমনকি তাদের নামে থাকা কোনো ক্রেডিট কার্ড দিয়েও লেনদেন করা যাবে না।
বার বার চেষ্টা করেও মন্তব্যের জন্য এস আলম গ্রুপের কোনো দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তাঁর পরিবার, বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন।
পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু
অর্থ আত্মসাৎকারীদের সম্পদ অধিগ্রহণ ও বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে বলে বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম কর্তৃক প্রেরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), সিআইডি ও দুদকের সহায়তায় “আত্মসাৎকারীদের সম্পদ অধিগ্রহণ ও বিদেশে পাচারকৃত অর্থ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু হয়েছে।”
ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা অর্থের পরিমাণ “লক্ষাধিক কোটি টাকার উপরে ধারণা করা হচ্ছে” জানিয়ে এতে বলা হয়, অর্থের “সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ের কাজ চলমান রয়েছে।”
অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ শুরু করা হয়েছে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।