‘মোখা’ অতিক্রমের সময় কক্সবাজারে হাজারো ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
2023.05.14
কক্সবাজার ও ঢাকা
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়ে রোববার সন্ধ্যায় ৬টায় বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিত্তে অঞ্চলে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মোখার আঘাতে বাংলাদেশে কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে মিয়ানমারে ভূমিধস ও গাছ পড়ে ছয়জন নিহত হবার সংবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোববার জানানো হয়, এদিন দুপুর ৩টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ বাংলাদেশের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ও দেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় আঘাত করে।
প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী মোখার প্রভাবে কক্সবাজারে দুই হাজার কাঁচা ঘর-বাড়ি পুরোপুরি এবং ১০ হাজার কাঁচা ঘর-বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।
প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বিভিন্ন স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বেনারকে বলেন, “আল্লাহর রহমতে আমরা বেঁচে গেছি। বড়ো ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করেছিলাম কিন্তু কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাইনি। আমরা ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছি।”
“মোখা মূলত সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও টেকনাফে আঘাত করেছে। সেন্টমার্টিনে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৭ কিলোমিটার, টেকনাফে এর চেয়ে কম। কক্সবাজার সদরে বাতাসের গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার,” জানান প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের প্রায় আড়াই হাজার ঘর ভেঙে গেছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান (আরআরআরসি)।
পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
‘দোকান-ঘর সব শেষ’
বেনার নিউজের টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে ঝড়ের তীব্রতা বাড়তে থাকে এবং দুপুর ৩টার দিকে আঘাত হানে। সাড়ে ৩টার দিকে ঝড়ের তীব্রতা সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং বিকেল ৫টার পরে পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হয়ে যায়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা হালিম আলী টেলিফোনে বেনারকে বলেন, “মোখার প্রভাবে দ্বীপের কাঁচা বাড়ি-ঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
হালিম মুদি দোকান চালিয়ে ১০ সদস্যের পরিবার চালাতেন। থাকতেন দোকান লাগোয়া একটি ঘরে।
“ঝড় থেকে বাঁচতে আমরা সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। ঝড়ের জোর ছিল প্রচণ্ড। ঝড়ের পরে এসে দেখি আমার দোকান-ঘর সব শেষ। এখন কোথায় থাকব, কী খাব!” বলেন তিনি।
ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি করেছিল। চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরে ছিল আট নম্বর বিপৎসংকেত।
এই পূর্বাভাসের আগে থেকেই সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে দলে দলে মানুষ টেকনাফে আশ্রয় নিতে থাকেন। মূলত অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিরা টেকনাফে চলে আসেন।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা চম্পা বেগম ১০ সদস্যের পরিবার নিয়ে নাফ নদীর পাড়ে একটি কাঁচা বাড়িতে থাকতেন। মোখার প্রভাবে তাঁর বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গেছে।
তিনি বেনারকে বলেন, “ঝড় তো সব শেষ করে দিলো। কোথায় থাকব, কী করব এখন! বুঝতে পারছি না।”
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোথাও কোনো ভূমিধসের খবর পাওয়া যায়নি।
আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে তেমন বড়ো ঢেউ দেখা যায়নি, তবে সাগর উত্তাল ছিল।
প্রশাসনের নিষেধ সত্ত্বেও অনেক পর্যটক সমুদ্র সৈকতে গেছেন মোখা দেখতে। দেশের আরেকটি সমুদ্র সৈকত পটুয়াখালীতে একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে।