বান্দরবান সীমান্তে মাদক চোরাকারবারিদের হামলা, ডিজিএফআই কর্মকর্তা নিহত
2022.11.15
কক্সবাজার ও ঢাকা
মিয়ানমার সংলগ্ন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মাদক চোরাকারবারিদের হামলায় বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের একজন কর্মকর্তা এবং একজন রোহিঙ্গা নারী নিহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন আরও এক র্যাব সদস্যসহ তিন রোহিঙ্গা।
সোমবার রাত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, সোমবার রাতে গুলিতে নিহত ডিজিএফআই কর্মকর্তা রেজওয়ান আহমেদ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার ছিলেন।
মঙ্গলবার নো-ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ বেনারকে বলেন, বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ছাড়াও গোলাগুলির ঘটনায় সাজেদা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে ওই নারীকে দাফন করা হয়েছে।
“এ ঘটনায় শিশুসহ আরো তিনজন রোহিঙ্গা আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। আমরা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি,” বলেন দিল মোহাম্মদ।
তিনি জানান, “শূন্যরেখায় আমরা সবাই ভয়ে আছি। কোন সময় কী হয়, বলা খুবই মুশকিল। এখান থেকে আমাদের সরিয়ে নেওয়া হোক।”
আইএসপিআর বলেছে, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখা সংলগ্ন এলাকায় সোমবার সন্ধ্যার পর র্যাব ও ডিজিএফআই যৌথ অভিযান চালাতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।
তদন্তে ঘটনার সত্যতা জানা যাবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বান্দরবানে ডিজিএফআই সদস্য নিহতের ঘটনায় মঙ্গল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তুমব্রু সীমান্তে গোয়েন্দা কর্মকর্তার ওপর গুলি চালানো মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করতে সরকার কাজ করছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে মাদকবিরোধী অভিযানে ছিলেন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সেখানে একজন কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কীভাবে তিনি (নিহত) হয়েছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আমরা কাজ করছি।”
মাদক কারবারিরা গুলি চালিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্তে ঘটনার সত্যতা জানা যাবে।
বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে নো-ম্যানস ল্যান্ডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা যেখানে ঘটেছে, সেখানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করেন বলেও জানান মন্ত্রী।
আতঙ্কে তুমব্রু সীমান্তের মানুষ
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে গোয়েন্দার সংস্থার কর্মকর্তা নিহত ও র্যাব সদস্য আহতের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
ভয়ে লোকজন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে সীমান্তজুড়ে। ফলে অন্যদিনের তুলনায় তুমব্রু বাজারে ছিল না মানুষের আনাগোনা।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশর (বিজিবি) চেক পোস্টে ব্যাপক কড়াকড়ি লক্ষ করা যায় এবং বহিরাগতদের প্রবেশ ছিল প্রায় নিষিদ্ধ।
এ বিষয়ে তুমব্রু ঘুমধুম ইউনিয়নের পরিষদের চৌকিদার মোহাম্মদ জব্বার বেনারকে বলেন, “তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আস্তানা গড়ে তুলেছে। তাদের কাছে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। ফলে এখানকার সীমান্তের লোকজন নিরাপত্তাহীন জীবন যাপন করছে। এখানকার মানুষের কথা ভেবে সীমান্ত থেকে ক্যাম্পটি সরিয়ে নেওয়া দরকার।”
সোমবার রাতের ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, “সন্ধ্যায় বাজারে ছিলাম। হঠাৎ ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। মঙ্গলবার সকালে জানতে পারি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা মারা গেছেন।”
থমকে গেছে রোহিঙ্গাদের চলাচল
তুমব্রু বাজারের দোকানি নুর বশর জানান, “দোকানে কেনাবেচা নেই। বাজারে মানুষের দেখা মিলছে না। তা ছাড়া সকাল থেকে শূন্যরেখা ক্যাম্পের কোনো রোহিঙ্গা বাজারে আসেনি।”
“স্থানীয় লোকজনও তেমন ঘর থেকে বের হয়নি। কালকের ঘটনার পর থেকে আমরা ভয়ের মধ্য আছি,” যোগ করেন তিনি।
স্থানীয় সিএনজি চালক সৈয়দ নুর বলেন, “কাল রাতে বিজিবির সঙ্গে তুমব্রু সীমান্তে লাশ ফেরত আনার সময় আমিও ছিলাম। এসময় রোহিঙ্গা এক নারীর লাশও আনা হয়েছিল। আহত কর্মকর্তার শরীরে আঘাত ও গুলির চিহ্ন দেখা গেছে।”
র্যাব-১৫ এর কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নিত্যানন্দ দাস বেনারকে বলেন, আহত র্যাব সদস্যের ঢাকায় সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।”