হেফাজত নেতার সমালোচনা করে পাঁচ মাস জেলে ঝুমন দাস
2021.09.03
ঢাকা
আপডেট: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১। ইস্টার্ন সময় বিকেল ০৩:১৫
হেফাজতে ইসলামের এক নেতাকে নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করার পর পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দি আছেন সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ঝুমন দাস আপন (২৮)। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু সংগঠনগুলো ঝুমনের মুক্তি দাবি করলেও তাঁর জামিন মিলছে না।
ঝুমনের মুক্তি দাবি করে আয়োজিত সমাবেশগুলোতে বলা হয়, ঝুমন দাস লিখেছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক এমন একজন লোক যিনি হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এ কথা যদি অপরাধ হয় তাহলে অনেক মন্ত্রী এমপিদের আজ কারাগারে থাকার কথা।
স্থানীয় আইনজীবী ও ঝুমনের পারিবারিক সূত্রগুলো বলছে, অন্তত পাঁচবার তাঁর জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়েছে নিম্ন আদালতে। এখন হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানানো হয়েছে।
গত মার্চে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা মামুনুল হককে সমালোচনার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ঝুমনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর পাঁচদিন আগেই তাঁকে সন্দেহভাজন মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ পর্যন্ত সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালত মোট পাঁচবার ঝুমনের জামিনের আবেদন নাকচ করেছে।
সর্বশেষ গত মাসে ঢাকায় হাইকোর্টে করা জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে বলে শুক্রবার বেনারকে জানান ঝুমনের বড়ো ভাই নূপুর চন্দ্র দাস।
তিনি বলেন, “আশা করছি, দ্রুত তাঁর জামিন হয়ে যাবে। কিন্তু জেল থেকে বের হওয়াটা তাঁর জন্য ভালো না খারাপ তা আমরা বুঝতে পারছি না। দেশব্যাপী এভাবে আলোচনায় আসার কারণে তাঁর মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হয়েছে।”
“অর্থনৈতিকভাবে সমাজের নিচুর স্তরের মানুষ আমরা। যে কারণে আমাদের আরও বেশি ভুগতে হচ্ছে,” বলেন নূপুর।
হামলায় জড়িত সবার জামিন হয়ে গেছে
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ১৫ মার্চ শানে রিসালত সম্মেলন নামে সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও সরকার বিরোধী বক্তব্য দিয়ে আলোচিত হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ওই সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেন।
এর পরের দিন ১৬ মার্চ ফেসবুকে মামুনুলের ওই আচরণের সমালোচনা করেছিলেন পার্শ্ববর্তী উপজেলা শাল্লার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস।
ফেসবুকে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন। এরপরই ক্ষেপে যায় স্থানীয় হেফাজত ইসলাম ও মামুনুলের অনুসারীরা।
ওই রাতেই তারা প্রথমে হিন্দু পল্লী নোয়াগাঁও আক্রমণ করতে আসে৷ তখন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা ঝুমনকে পুলিশে হাতে তুলে দিয়ে উত্তেজিত হেফাজত সমর্থকদের শান্ত করেন৷
ওই সময়ে তারা হামলা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে গেলেও পরদিন সকালে মাইকে ঘোষণা দিয়ে শাল্লা উপজেলার কাশিপুর এবং দিরাই উপজেলার নাসনি, সন্তোষপুর ও চন্দ্রপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে জড়ো করে তাণ্ডব চালায়। বেশ কিছু পারিবারিক মন্দিরসহ প্রায় ৯০টি বাড়ি তারা ভাঙচুর করে।
এর পরদিনই দেড় হাজার লোককে আসামি করে শাল্লা থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ বকুল এবং ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল করিম।
বিবেকানন্দের মামলায় প্রধান আসামি করা হয় দিরাইয়ের তাড়ল ইউনিয়নের সদস্য স্বাধীন মিয়াকে। এ মামলায় ৮০ জনের নাম ও অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরেকটি মামলা করা হয় শাল্লা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে। তাতে আসামি করা হয় অজ্ঞাত পরিচয় দেড় হাজার ব্যক্তিকে।
“শাল্লার ওই সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত ১০৫ জনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করা হলেও তাদের সবারই জামিন হয়ে গেছে,” বেনারকে জানান সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) দেবাংশু শেখর দাস।
এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংবিধানে “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযোজনের মাধ্যমে” দেশের সংখ্যালঘুদের “দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে বড়ো সংগঠন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।
প্রসঙ্গত, নারী কেলেঙ্কারিসহ হামলা–ভাঙচুরের একাধিক মামলায় হেফাজত নেতা মামুনুল হক বর্তমানে জেলে রয়েছেন।
আপডেট: ঝুমনের জামিন আবেদন সংক্রান্ত তথ্যগত ভুল সংশোধন করা হলো।