ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: দুর্ঘটনায় ৩ পুলিশের মৃত্যুতে ফেসবুকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লিখে মাদ্রাসা শিক্ষক জেলে
2023.09.01
ঢাকা
লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে পড়া পিকআপ ভ্যানে ট্রেনের ধাক্কায় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ মন্তব্য করে জেলে গেছেন এক মাদ্রাসা শিক্ষক।
পুলিশ বাদী হয়ে মো. আব্দুল্লাহ নামে ওই শিক্ষকের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে আদালত তাঁকে জেলে পাঠায়।
গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে দুর্ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্য নিহত হন। সেই সংবাদ একটি সংবাদপত্রের ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হয়। আব্দুল্লাহ সেখানে কমেন্টে লেখেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’। এর অর্থ ‘সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য।’
সাধারণত যেকোনো আনন্দময় ও সুসংবাদের ক্ষেত্রে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা হয়ে থাকে।
পুলিশের ভাষ্য, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুল্লাহ কমেন্ট করার পরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ কমেন্ট করতে শুরু করেন।
ওই ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) একটি দল সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ এলাকা থেকে আব্দুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে।
বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার আদালত তাঁকে হাজতে পাঠানোর আদেশ দেয়। সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রেজাউল মাসুদ বেনারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, “আব্দুল্লাহ হেফাজতে ইসলামপন্থী একটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক এবং স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম। তিনি নিজেই সেই পোস্টে কমেন্ট করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ ধারায় আব্দুল্লাহকে অভিযুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তিনি এমন একটি ঘটনা ঘটিয়েছেন যার ফলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এমন উপাদান রয়েছে।”
“তাঁর কমেন্টের পর বহু লোক এই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ কমেন্ট করতে থাকে। এতে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ, অসন্তোষ ও অস্থিরতা তৈরি হতে থাকে। ফলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির উপক্রম হয়,” যোগ করেন তিনি।
তিন থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ ধারা সম্পর্কে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুন-অর-রশীদ বেনারকে বলেন, “২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় তা একটি অপরাধ হবে।”
“এই অপরাধ কারো দ্বারা সংঘটিত হলে উক্ত ব্যক্তির তিন থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা শাস্তির বিধান আইনে রয়েছে,” বলেন হারুন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এই ধারাটি সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে একটি নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সেখানেও রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “নতুন আইনে এই ধারাটি থাকলেও সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর থেকে কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে।”
“তাই বলা যায়, আব্দুল্লাহর অপরাধ বিচারে প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে,” যোগ করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বেনারকে বলেন, “এতটুকু শুধু বলে রাখতে চাই, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি যেন ন্যায় বিচার বঞ্চিত না হন।”
বাংলাদেশের বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে তার জায়গায় ভিন্ন একটি আইন আনার সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই নতুন আইনটির নামকরণ করা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় পরিবর্তন এনে এই আইনটি করা হচ্ছে। আইনটি আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদে বিল আকারে পাসের জন্য উত্থাপন করা হবে। সেখানে এটি অনুমোদিত হবে বলেও জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।