বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে আইএমএফ
2022.11.09
ঢাকা
![বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে আইএমএফ](https://www.benarnews.org/bengali/news/bd-economy-11092022151514.html/@@images/f4a0f3d5-1443-4d53-b335-f8fe816b2377.jpeg)
সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
বুধবার রাজধানীর সচিবালয়ে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে সংস্থাটির সফররত প্রতিনিধি দলের চূড়ান্ত বৈঠক শেষে এ বিষয়ে একমত হয় আইএমএফ, যা একইদিনে উভয় পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে।
“আমরা যেভাবে ঋণ চেয়েছিলাম, ঠিক সেভাবেই ঋণ পেতে যাচ্ছি,” জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “২০২৬ সালের মধ্যে এ ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ পাওয়া যাবে, যার সুদ হার হবে গড়ে ২ দশমিক ২ শতাংশ।”
ঋণ বিষয়ে আইএমএফ এর সাথে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর মোট সাত কিস্তির এই ঋণের প্রথম কিস্তি আগামী ফেব্রুয়ারি ও সর্বশেষ কিস্তি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ছাড় করবে আইএমএফ।
ঋণ বিষয়ে আলোচনা করতে আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে সংস্থাটির প্রতিনিধিদল গত ২৬ অক্টোবর ঢাকায় আসে। বুধবার পর্যন্ত প্রতিনিধিদল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে।
“বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়, যার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া এবং প্রবৃদ্ধির গতিতে মন্থরতা সৃষ্টি হয়,” বলেন রাহুল আনন্দ।
আইএমএফ এর কাছে বাংলাদেশের ঋণ চাওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “সারা বিশ্বের অর্থনীতিই এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। উন্নত থেকে উন্নয়নশীল সব দেশে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। প্রায় সব দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির এ উত্তাপের আঁচ আমাদের অর্থনীতিতেও কিছুটা লেগেছে।”
“এ অস্থিরতার মধ্যে যাতে কোনো ধরনের সংকট ঘনীভূত না হয়, তা নিশ্চিত করতেই আমরা আগাম সতর্কতা হিসেবে আইএমএফ-এর কাছে ঋণের জন্য অনুরোধ করেছিলাম,” বলেন তিনি।
যেভাবে চেয়েছে, সেভাবেই ঋণ পেতে যাচ্ছে
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার যেভাবে চেয়েছে, সেভাবেই ঋণ পেতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ গত জুলাইয়ে আইএমএফ এর কাছে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা) ঋণ চেয়ে আবেদন করে। গত চার মাস ধরে এ নিয়ে এই ইস্যুতে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অনেক আলোচনা হয়েছে।
এসব আলোচনায় বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমানো, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়ানো, কর অব্যাহতি কমিয়ে আনা, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমানোর উপায়, রিজার্ভের হিসাব আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পায় বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তবে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
ঋণের ক্ষেত্রে আইএমএফ এর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের শর্ত দেয়া হয়েছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, কিছু সংস্কার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সারের ভর্তুকি নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি, সারে ভর্তুকি দিয়ে যাব। জ্বালানি তেলের মূল্য সময়ে সময়ে সমন্বয় করা হবে।
“জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ব্যবস্থাটি আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের সাথে সময়ে সময়ে সমন্বয় করা হচ্ছে। সামনে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমলে দেশের অভ্যন্তরেও তা একইভাবে কমানো হবে,” বলেন অর্থমন্ত্রী।
দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, গত বছর জুনে বাংলাদেশের মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট রিজার্ভ ৩৪.৩ বিলিয়ন ডলার বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর।
বাংলাদেশ যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেখায় তার পরিবর্তে আইএমএফ নিট রিজার্ভ দেখাতে বলেছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমান রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) এবং অন্যান্য ফান্ড বাদ দিলে নিট রিজার্ভের পরিমাণ “প্রায় আট বিলিয়ন ডলার কমবে,” বলে জানান গভর্নর।
সেই হিসেবে দেশে বর্তমানে নীট রিজার্ভের পরিমাণ ২৬.৩ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে ঋণখেলাপি কমিয়ে আনতে আইএমএফ এর দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করার কথাও জানান তিনি।
অর্থনীতিতে স্বস্তি ফেরাতে সহায়তা করবে
সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণ বিষয়ে আইএমএফ সম্মত হওয়ার বিষয়টিকে দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
এই ঋণ “বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি ফেরাতে সহায়তা করবে,” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, “দেশের আর্থিক খাতের যেসব সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নতুন নয়–এর আগে আইএমএফ বলেছে, আমরাও বলেছি। আইএমএফ বলেছে সেজন্য নয়, সরকার নিজের সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে এই সংস্কার কাজগুলো করতে চায়। অন্যথায় অর্ধেক করার পর বন্ধ হয়ে গেলে তাতে দেশের অর্থনীতির কোনও লাভ হবে না।”
এর আগে ২০১২ সালে আইএমএফ এর ঋণ পেয়েছিলো সরকার, যার জন্য নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক আইন পাশ করার পরামর্শ ছিল। সরকার ওই আইন পাশ করলেও পরবর্তীতে আইনে বেশকিছু কাটছাঁট করে ২০১৯ সাল থেকে তা বাস্তবায়ন করে। শুরুতে ১৫ শতাংশ হারে আইনে রাখা হলেও পরবর্তীতে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে খাতভিত্তিক আলাদা আলাদা ভ্যাট রেট করা হয়।