যুদ্ধ বন্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পদক্ষেপ চাইলেন শেখ হাসিনা

আহম্মদ ফয়েজ
2022.11.10
ঢাকা
যুদ্ধ বন্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পদক্ষেপ চাইলেন শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি করা গম খালাস করছেন শ্রমিকরা। ২২ জুন ২০২২।
[বেনারনিউজ]

রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে গোটা বিশ্বকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জানিয়ে যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার ইইউ’র কমিশন ফর হোম অ্যাফেয়ার্স ইয়ালভা জোহানসনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইইউ’র এই বৈঠক এমন সময়ে হলো, যখন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করছে বাংলাদেশ। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের মানুষকে যেকোনো অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলছেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনা এবং পরবর্তীতে যুদ্ধের কারণে আগামী বছর দুর্ভিক্ষ হতে পারে এমন আভাস দিয়ে তিনি বলছেন, দেশের মানুষ যেন ওই পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকটে না পড়ে, তার জন্য যেন এক ইঞ্চি ফসলি জমি খালি পড়ে না থাকে।

সরকারও দেশের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানি করতে তৎপর বলেও জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

ইহসানুল করিম জানান, বৈঠকে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের জন্য একটি বড়ো ধরনের বোঝা এবং নতুন শিশু জন্ম গ্রহণের সাথে সাথে প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়ছে।”

এ সময় জোহানস জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইইউ বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

ইউক্রেন থেকে এসেছে গমের জাহাজ

গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর প্রথমবারের মতো বুধবার যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ৪৯ হাজার ৪০০ টন সরকারি গম নিয়ে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদের।

বন্দরে আসা জাহাজের গমের নমুনা পরীক্ষা বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করছি কাস্টমস থেকে ক্লিয়ারেন্স পেলে এই গম নেমে যাবে।”

তিনি জানান, এর আগে ১৩ অক্টোবর রাশিয়া থেকে ৫২ হাজার টন গম নিয়ে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। রাশিয়া থেকে গমের আরেকটি চালানও আসার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।

গত সেপ্টেম্বরে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) ভিত্তিতে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করছে বাংলাদেশ।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগর উপকূলে নৌ–অবরোধ আরোপের পর ইউক্রেনের খাদ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। দরিদ্র দেশগুলো, বিশেষ করে যারা রাশিয়া-ইউক্রেনের খাদ্যশস্যের মজুদের ওপর নির্ভরশীল, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গত আগস্টে তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া এবং ইউক্রেন কৃষ্ণসাগরের মাধ্যমে শস্যের চালান পুনরায় শুরু করার বিষয়ে জাতিসংঘের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

ওই চুক্তির অধীনে এক লাখ ১৫ হাজার টন কৃষি পণ্য নিয়ে চারটি জাহাজ গত ২৮ সেপ্টেম্বর আফ্রিকা, এশিয়া এবং ইউরোপের উদ্দেশ্যে ইউক্রেনের ইউঝনি, চোরনোমর্স্ক বন্দর ছেড়ে যায়।

গমের বিকল্প বাজার খুঁজছে বাংলাদেশ

দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য গমের চাহিদা মেটাতে এতদিন প্রধানত রাশিয়া এবং ইউক্রেনের ওপরই নির্ভর করত বাংলাদেশ। কিন্তু চলমান যুদ্ধের ফলে এই দুটি দেশ থেকে গম আমদানির পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ।

এই সংকট সমাধানে ইতোমধ্যে বিকল্প উপায় খুঁজতে শুরু করেছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (বৈদেশিক সংগ্রহ) মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বেনারকে বলেন, “প্রয়োজনে বেশি দামে হলেও বিকল্প উৎস থেকে গম আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।”

ইতোমধ্যে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অস্ট্রেলিয়া আমাদের গম দিতে চায়। কানাডার সঙ্গেও আলোচনা এগোচ্ছে।”

বিশ্ব বাজারে বর্তমানে প্রতি বুশেল (এক বুশেল সমান ২৭.২১ কেজি) গমের দাম সাড়ে আট ডলারের কাছাকাছি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৯ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে সরকারি গুদামে মাত্র ২ দশমিক ১৩ লাখ টন গম মজুদ রয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১০ লাখ টন গম স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় এবং বাকি চাহিদা পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে।

খাদ্য অধিদপ্তরের হিসেবে, সরকার মাত্র ৫ লাখ টন গম আমদানি করে চাহিদা মেটায়। বাকি ৬০ লাখ টন গম আমদানি করে বেসরকারি কোম্পানিগুলো।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশ মোট গমের ৪৫ ভাগ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানি হয়েছে, ২৩ ভাগ এসেছে কানাডা থেকে, ১৭ ভাগ ভারত থেকে এবং বাকি কিছু অন্যান্য দেশ থেকে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।