পণ্য না কেনার ঘোষণা দিলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল ও চিনি কিনছে বাংলাদেশ
2023.05.24
ঢাকা
যেসব দেশ স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা দেয় তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ কোনো কিছু কিনবে না - প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণা দেওয়ার এক সপ্তাহের ব্যবধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি ক্রয় সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে গত ১৭ মে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি কেনার সিদ্ধান্ত হয়।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রস্তাবের ভিত্তিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিক্রি করবে এসব পণ্য।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান এই তথ্য জানিয়েছেন।
দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে এসব পণ্য কেনা হবে জানিয়ে সাঈদ মাহবুব বলেন, “টিসিবি’র জন্য ১ কোটি ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনবে সরকার।”
“এর মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনা হবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং বাকিটা দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে,” বলেন সাঈদ মাহবুব।
এই তেল দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮৩ টাকা লিটার দরে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৪০ টাকা লিটার দরে কেনা হবে বলেও জানান তিনি।
সভা শেষে সাঈদ মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, “বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে অ্যাকসেন্টুয়েট টেকনোলজি ইনকরপোরেশন (স্থানীয় এজেন্ট ওএমসি লিমিটেড) থেকে এই সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এই ক্রয়ে সরকারের মোট খরচ ১২৯ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা হবে বলে জানান তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরও এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৭০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সাঈদ মাহবুব বলেন, এতে প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৮২ টাকা ৬৫ পয়সা যা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় ৪২ টাকা বেশি।
গত ১৭ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাড়ে ১২ হাজার টন চিনি কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
সাঈদ মাহবুব জানান, টিসিবি কর্তৃক মার্কিন কোম্পানি অ্যাকসেন্টুয়েট টেকনোলজি ইনকরপোরেশন থেকে এই চিনি ক্রয় করা হবে।
তিনি জানান, গত মাসে কমিটির অনুমোদন চেয়ে এই প্রস্তাবটি জমা দিয়েছিল টিসিবি।
পাস হওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী, টিসিবি কর্তৃক আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে স্থানীয় ওএমসি লিমিটেডের মাধ্যমে ৬৬ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকায় চিনি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন কোম্পানি থেকে পণ্য ক্রয়ের সিদ্ধান্তগুলো এমন সময়ে নেওয়া হলো যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর থেকে দেশে ফিরে একটি অনুষ্ঠানে ও একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যেসব দেশ স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেয়, সেসব দেশ থেকে কোনো পণ্য কিনবে না তার সরকার।
গত ১৫ মে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা আমাদের অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীকে বলে দিয়েছি, কেনাকাটার ক্ষেত্রে যারা আমাদের ওপর স্যাংশন দেবে, আমরা তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু কিনব না।”
এখন থেকে বিদেশি জিনিসপত্র কেনার ক্ষেত্রে যারা নিষেধাজ্ঞা দেয় তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু না কেনার বিষয়ে শর্ত থাকবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরও কেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য কেনা হচ্ছে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সাঈদ মাহবুব বলেন, “এটা তো আমি মন্তব্য করার এখতিয়ার রাখি না। কী পাস হলো, আমি শুধু সেটা জানালাম।”
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য ক্রয় প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “আমার কাছ মনে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি ছিল রাজনৈতিক। আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”