বিদেশি কূটনৈতিকদের সাথে বিএনপির বৈঠক, ক্ষুব্ধ সরকার

আহম্মদ ফয়েজ
2022.07.13
ঢাকা
বিদেশি কূটনৈতিকদের সাথে বিএনপির বৈঠক, ক্ষুব্ধ সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ঢাকার একটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী উপকরণ নিয়ে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮।
[মনির উজ জামান/এএফপি]

পরপর দুই দিন বাংলাদেশে নিযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিদেশী কূটনৈতিকদের সাথে বিএনপির বৈঠকের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

বুধবার বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলি এবং আগের দিন মঙ্গলবার জাতিসংঘের নবনিযুক্ত আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বৈঠক করেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় “বিদেশিদের কাছে দৌড়-ঝাঁপ না করে জনগণের কাছে যেতে” বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

বুধবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সাথে দেড় ঘণ্টার বৈঠকে অংশ নেন চার্লস হোয়াটলি।

মঙ্গলবার একই স্থানে বিএনপি নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন গুয়েন লুইস।

তবে বিএনপি এবং উভয় কূটনীতিকই বৈঠকের বিষয়ে ব্যাপক গোপনীয়তা বজায় রাখছেন।

এই বৈঠকগুলো এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করতে আগামী রোববার থেকে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যেই আগামী সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

আমরা দেখছি, বিএনপি সব সময় বিদেশি রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার সঙ্গে দেখা করে। কিন্তু দেশের জনগণই রাষ্ট্রের মালিক এবং তারাই ক্ষমতার মালিক। তারাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। রাষ্ট্রদূত বা বিদেশি সংস্থার প্রতিনিধিদের এদেশে কাউকে ভোট দেওয়ার অধিকার নেই,” ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাথে বিএনপির বৈঠকের পর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন হাছান মাহমুদ।

ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে আমাদের যে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক এবং সেই সম্পর্কের মধ্যে যে প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো আছে সেসব বিষয়ের ওপরে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।”

সেই প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

অপরদিকে, মঙ্গলবার জাতিসংঘের প্রতিনিধির সাথে বৈঠকের পর গণমাধ্যমের সাথে এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেনি বিএনপি।

দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করা দেশকে ছোট করার সামিল উল্লেখ হাছান মাহমুদ বলেন, “এদেশে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূত বা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি কাউকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসানোর অধিকার রাখে না।”

বৈঠকের বিষয়ে জাতিসংঘ এবং ইইউ কর্মকর্তাদের সাথে বেনারের পক্ষ থেকে ইমেইল ও টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রাজনৈতিক তাৎপর্য’ আছে

বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বিএনপির বৈঠকের বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রতিক্রিয়া থেকে এসব বৈঠক যে “রাজনৈতিক তাৎপর্য বহন করে” তা অনুমান করা যায় বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী।

তাঁর মতে, “এসব বৈঠকে নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে থাকে।”

যুক্তরাষ্ট্র এবং তাঁর মিত্ররা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক সাধারণ নির্বাচন চায়,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ক্ষমতার অবৈধতার কারণে 'সুষ্ঠু নির্বাচন' শব্দগুলো ক্ষমতাসীন দলের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

বাংলাদেশে বিদেশি কূটনীতিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ ধরনের বৈঠকের “সাধারণ ব্যাপার” উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য উন্নয়ন সহযোগীরা এখন নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সাথে বৈঠক করছে।

নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের পরামর্শ নিয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরি করায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে ইসি আশাবাদী।

আহসান বলেন, “আমরা আশা করি, আগামী সপ্তাহে (রবিবার) শুরু হওয়া সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনকে উত্তম পরামর্শ দেবেন।”

সংলাপে যাবে না বিএনপি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেনারকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁর দল নির্বাচন কমিশন বা কোনো সরকারি সংস্থার সাথে আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার আলোচনায় অংশ নেবে না।

আমাদের দলীয় অবস্থান খুবই পরিষ্কার, যতদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে আমরা পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে কারও সাথে আলোচনায় বসব না,” যোগ করেন ফখরুল।

তিনি জানান, দলীয় এমন সিদ্ধান্তের ফলেই নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ, সার্চ কমিটির সংলাপ এবং সর্বশেষ ইসির ইভিএম বিষয়ক সংলাপে অংশ নেয়নি বিএনপি।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা

গত ৩ জুলাই অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) ভুক্ত ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সাথে এক বৈঠকে জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় দেখতে চায় তাঁদের দেশ।

নির্বাচন কমিশনে ওই বৈঠক শেষে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেন, তাঁরা বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ দেখতে চান। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে যেকোনো সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত সদস্য দেশগুলো।

তার আগে গত ৮ জুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সাথে বৈঠকের পর বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে এমন একটি নির্বাচন চায় যেখানে জনগণ তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

আওয়ামী লীগ ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে টানা তিনটি সংসদীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। এর মধ্যে শেষ দুটি ভোট জালিয়াতি ও অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগে দেশ-বিদেশে সমালোচিত হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।