ভোটকেন্দ্রে ক্যামেরা: গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ নাকচ করল ইসি
2022.10.19
ঢাকা

ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোয় ভোটারদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা খর্ব হয়েছে বলে মনে করছেন সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মন্ত্রীর এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, সদ্য বাতিল হওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের ‘গোপনকক্ষে’ ক্যামেরা বসানো হয়নি।
ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তর থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ব্যাপক ভোট অনিয়ম দেখার পর গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গত তিনটি কমিশনের মেয়াদে অনিয়মের কারণে জাতীয় সংসদের কোনো আসনের নির্বাচন বন্ধ ঘোষণার ঘটনা ছিল এটিই প্রথম।
তবে ‘আইনজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের মতে’ ভোটের গোপন বুথে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে কে কাকে ভোট দিচ্ছে তা দেখা মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সেই কাজটি করে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করেছে বলে বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন ড. হাছান মাহমুদ।
তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “ভোটকেন্দ্রে অবশ্যই সিসি ক্যামেরা থাকতে পারে। অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ সেখানে ঢুকছে কি না বা সেখানে কোনো গণ্ডগোল বা বিশৃঙ্খলা হচ্ছে কি না সেটি দেখার জন্য অবশ্যই সিসি ক্যামেরা থাকতে পারে।”
“কিন্তু গোপনকক্ষে ক্যামেরা লাগিয়ে কে কোন মার্কায় ভোট দিচ্ছে সেটি দেখাকে বিশেষজ্ঞরা মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ বলছেন,” বলা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
অভিযোগ প্রত্যাখ্যান নির্বাচন কমিশনের
তথ্য মন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে যোগাযোগ করা হলে গাইবান্ধা উপনির্বাচনে “ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল” কিন্তু “গোপনকক্ষে ক্যামেরা বসানো হয়নি,” বলে বুধবার বেনারকে জানান ইসি সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখার প্রধান ও যুগ্মসচিব এস. এম. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, “নির্বাচনী কেন্দ্রের কক্ষ এবং কক্ষের গোপনকক্ষ এক কথা নয়। আমরা যেভাবে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছিলাম তাতে ভোটাররা কোন প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন তা দেখা যাবে না।”
গোপন কক্ষে ভোটার ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করছে কি না তা মনিটর করতেই ভোটকক্ষে ক্যামেরা বসানো হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে কোনো আইন লঙ্ঘন করেনি নির্বাচন কমিশন।”
সাবেক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া সাঘাটা-ফুলছড়ি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ আসনে গত ১২ অক্টোবর উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা গোপনকক্ষে ঢুকে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে অন্য প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল ও তাঁর অন্যান্য সহকর্মীরা সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকায় সদরদপ্তরে বসে জালিয়াতি প্রত্যক্ষ করেন এবং ভোট বন্ধ করে দেন।
বন্ধ হওয়া গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের ভোট আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে বলে বুধবার জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
অহেতুক বিতর্ক
গাইবান্ধা উপনির্বাচনে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার নিয়ে আওয়ামী লীগ যে প্রশ্ন তুলেছে তা ‘অহেতুক বিতর্ক’ বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ প্রধান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন সিসিটিভি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে ঠিক কাজ করেছে। এতে কোনো আইন লঙ্ঘন হয়নি। এই কাজ আওয়ামী লীগ ছাড়া সকলের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।”
“আমি মনে করি, ভবিষ্যতে অন্যান্য ভোটে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হলে ভোট ভালো হবে, অনিয়ম কিছুটা হলেও রক্ষা করা যাবে,” বলেন অধ্যাপক কলিমউল্লাহ।
গাইবান্ধার উপনির্বাচনে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারকে সঠিক সিদ্ধান্ত হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের অনেকেই। বুধবার বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সাথে মতবিনিময়কালে তাঁরা এই অভিমত দেন বলে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল।
সভা শেষে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার এম. সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “আমি আজকের সভায় বলেছি, ইভিএম কেনার চাইতে আপনারা সিসিটিভির ব্যবস্থা করেন। এর মাধ্যমে মনিটরিং করা সম্ভব হবে।”
তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে মনিটর করা হবে কি না সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে বেনারকে জানান যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান।
পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘এখনো অনেক দূরে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সারা দেশের সকল আসনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা এবং একটি সিস্টেমের মাধ্যমে তদারকি করা খুবই কঠিন।”
“আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমপক্ষে দুই লাখ ২০ হাজার কক্ষ থাকবে। এত সংখ্যক ক্যামেরা এবং সেগুলো পরিচালনা করা বিরাট দুরূহ কাজ,” বলেন তিনি।