দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

কামরান রেজা চৌধুরী
2019.10.29
ঢাকা
দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র  নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছবি।
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

পাবনার রূপপুরের মতো দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশের কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান।

কয়েক বছর আগে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক জনসভায় বৃহত্তর বরিশাল জেলায় একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ​ কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর এই প্রথম সরকারি ফোরামে দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দিলেন তিনি।

পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান বেনারকে বলেন, “আজ একনেক সভায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই সরকার এখন রূপপুরের পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে।”

মন্ত্রী বলেন, পাবনার রূপপুরের মতো দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও শান্তিপূর্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে।

জাতীয় সংসদে আইন পাশ করে পারমাণবিক শক্তির অপব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। তবে শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক প্রযুক্তির পক্ষে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক দক্ষিণাঞ্চলে দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য একজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করেছে আণবিক শক্তি কমিশন। তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কত ক্ষমতা সম্পন্ন হবে, সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি বলে বেনারকে জানান প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুসারে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য আমরা বর্তমানে পাঁচটি স্থান নিয়ে কাজ করেছি। তবে, পারমাণবিক কেন্দ্রটি পটুয়াখালী জেলার নওডোবা রাঙ্গাবালি অথবা বরগুনা সদরে স্থাপন করা হতে পারে।”

এর আগে বরগুনার পদ্মারচর, পাথরঘাটা, লালদিয়ারচর, নিশানবাড়ি ও আমতলা, বরিশালের হিজলা উপজেলার চরমেঘা, পটুয়াখালী জেলার নওডোবা রাঙ্গাবালি, চরমোন্তাজ ও সোনারচর, নোয়াখালী জেলার উরিরচর, চট্টগ্রামের বাঁশখালী এবং কক্সবাজার জেলার সোনাদিয়াতে ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনের কথা চিন্তা করে আণবিক শক্তি কমিশন।

মিজানুর রহমান বলেন, স্থান নির্বাচনের পর সেখানে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোন দেশের সহায়তা নেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে চীনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ওই কাজ পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। একাধিক চীনা প্রতিষ্ঠান সরকারের সাথে আলোচনা শুরু করেছে।

চায়না ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার কো-অপারেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান আণবিক শক্তি কমিশানের চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে আরও দুটি চীনা কোম্পানি কমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

প্রকল্প পরিচালক মিজানুর বলেন, চীন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং মন্ত্রী ও আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে আগ্রহের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছে।

তবে কারা এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের অগ্রগতি

মন্ত্রী আব্দুল মান্নান মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে বলেন, সব ঠিক থাকলে আগামী ২০২৪ সালে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।

বাংলাদেশে কোনও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নেই। ষাটের দশকে পাবনা জেলার রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ হাতে নেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইও হয়েছিল। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।

স্বাধীন হওয়ার পর আর কোনো সরকারই সেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের কাজে হাত দেয়নি।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরই এই কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। রাশিয়ার সাহায্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়ার পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের সাথে চুক্তি করে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন।

বাংলাদেশ এবং রাশিয়া যৌথভাবে প্রকল্পটির অর্থায়ন করছে। প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। প্রকল্প সমাপ্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। দুই ইউনিটের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২ হাজার  ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

এই প্রকল্পের জীবন শক্তি হবে ৫০ বছর। আর তা সংস্কার করে দাঁড়াবে ৮০ বছরে। পাঁচ স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বেষ্টনি থাকায় এই প্রকল্পে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। জাপানের ফুকুসিমা দুঘর্টনার কথা মাথায় রেখে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত প্লানটি বিদ্যুৎ সরবরাহবিহীন নিরাপদে থাকবে।

মঙ্গলবার একনেক সভায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পারমাণবিক নিরাপত্তা তদারকি করার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় সরকার। এক হাজার ৭১০ কোটি ৬৩ লাখ টাকার প্রস্তবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এর আওতায় অবকাঠামো ছাড়াও পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের নীতিমালা ও প্রবিধান প্রণয়ন করা হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।