নদী রক্ষা কমিশন প্রতিবেদন: সারা দেশে ৬৩ হাজারের বেশি নদী দখলদার

শরীফ খিয়াম
2021.01.12
ঢাকা
নদী রক্ষা কমিশন প্রতিবেদন: সারা দেশে ৬৩ হাজারের বেশি নদী দখলদার ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা একটি মসজিদ। ১৯ অক্টোবর ২০১৯।
[শরীফ খিয়াম/বেনারনিউজ]

বাংলাদেশে ৬৩ হাজারের বেশি নদী দখলদার চিহ্নিত করার পর এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের (এনআরসিসি) চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। 

মঙ্গলবার ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এনআরসিসি দেশের সাত শতাধিক নদীতে মোট ৬৩ হাজার ২৪৯ জন দখলদারকে চিহ্নিত করার কথা জানায়। 

“দখলদারদের তালিকাভুক্ত করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন তাদের চিহ্নিত করে চলেছে,” জানিয়ে অনুষ্ঠান শেষে ড. মুজিবুর বেনারকে বলেন, “যে কারণে আমরা মনে করি, চিহ্নিত দখলদারের সংখ্যা আরো বাড়বে।” 

তবে নদীগুলোর সীমানা সঠিকভাবে চিহ্নিত না থাকায় দখলদারের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়াটি ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে মনে করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল। 

বেনারকে তিনি বলেন, “নদীর দখলদারের তালিকা তৈরি করতে গেলে আগে নদীর সীমানা চিহ্নিত করতে হবে। দেশের কোথাও সেটা যথাযথভাবে করা হয়নি এখনো।” 

তাঁর দাবি, “নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করা গেলে শুধু ঢাকাতেই এর চেয়ে বেশি দখলদার পাওয়া যাবে।” 

শরীফ জামিলের দাবিকে “অমূলক নয়” মন্তব্য করে এনআরসিসি চেয়ারম্যান বলেন, “তবে এই প্রক্রিয়াটি অব্যাহত থাকলে এক সময় সব দখলদারের নামই তালিকায় চলে আসবে।” 

প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নদী দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। সারাদেশে ৪৯ হাজার ১৬২ জন নদী দখলদারের কথা গত বছরের জানুয়ারিতে সংসদকে জানিয়েছিলেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ। এর সাথে নতুন করে মঙ্গলবার যুক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৮৭ জন দখলদারের নাম। 

এর মধ্যে গত এক বছরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ), পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা-উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ১৮ হাজার ৭৮২ দখলকারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানান এনআরসিসি চেয়ারম্যান। 

কয়েক দশকের দখলদারদের এক বছরের মধ্যে উচ্ছেদ করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে বেনারকে তিনি বলেন, “উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য প্রশাসনকে কিছুই দিতে পারিনি আমরা। অর্থ ও জনবল সংকট নিয়েও তারা যতটুকু করেছে, তাতেই আমরা আশাবাদী। প্রতিটি জেলায় উচ্ছেদ হয়েছে।” 

“প্রভাবশালীদের চাপ থাকা সত্ত্বেও আমরা ঝাঁকুনিটা দিতে পেরেছি,” জানিয়ে তিনি বলেন, “কাউকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি।” 

উচ্ছেদ করা কিছু এলাকা পুনর্দখলের চেষ্টা হলেও তার সংখ্যা একেবারেই নগণ্য বলে জানান বলেন ড. মুজিবুর। 

তিনি বলেন, “আরো দুই বছর এটা অব্যাহত রাখা গেলে এবং পুনর্দখল ঠেকিয়ে প্রয়োজনীয় এলাকায় খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনলে উদ্যোগটি টেকসই ফল দেবে।” 

তবে “শুধু উচ্ছেদ আর পুনর্দখল ঠেকালেই হবে না। নতুন করে দখল হচ্ছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার,” মনে করেন শরীফ জামিল। 

‘দখলদার মানেই ক্ষমতাবান’

নদী বিষয়ক নাগরিক সংগঠন রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকনের মতে, “দখলদার মানেই ক্ষমতাবান। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক, এই তিন ধরনের ক্ষমতাশালীরাই নদী দখল করছে।” 

তাঁর মতে এইসব ক্ষমতাবানদের উচ্ছেদ করা সহজ না হলেও “সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন একযোগে শুরু করলে একমাসের মধ্যেই সব দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব।” 

নদী দখলমুক্ত করার ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও “মাঠপর্যায়ে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না,” বলে মনে করেন তিনি। 

নদী দখল “বিভিন্ন জনপদে মানবিক বিপর্যয় নিয়ে আসছে,” বলে জানান শরীফ জামিল। 

প্লাবন ও নদী ভাঙন বৃদ্ধির জন্য দখলদারদের দায়ী করে তিনি বলেন, “গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্রের মতো জীবন্ত নদী যে পথ দিয়ে বঙ্গোপসাগরে যায়, তাঁকে আপনি নষ্ট করলে তারাও আপনাকে ধ্বংস করবে। এটা বুঝতে না পারাটা অদূরদর্শিতা।” 

তাঁর মতে, “সরকারের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। বিষয়টিকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে।” 

পাউবোর হিসেবে দেশের অভ্যন্তরে ৪০৫টি নদ-নদী ও ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে। তবে রিভারাইন পিপলের হিসাবে এর সংখ্যা সহস্রাধিক।

এক আইনজীবীর রিটের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে বাংলাদেশ হাইকোর্ট।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।