একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য দিতে হবে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত কার্বন কর

কামরান রেজা চৌধুরী
2023.06.23
ঢাকা
একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য দিতে হবে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত কার্বন কর বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা শহরে যানজটের অন্যতম কারণ ব্যক্তিগত গাড়ি। ছবিটি ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের বনানী এলাকা থেকে তোলা। ২৭ মার্চ ২০২৩।
[বেনারনিউজ]

একটার বেশি ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলেই এখন বছরে ২৫ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়তি কর গুণতে হবে।

দেশে প্রথমবারের মতো কার্বন ট্যাক্স নামে এই কর চালু হতে যাচ্ছে। রোববার জাতীয় সংসদে এই বিধানসহ বিভিন্ন কর প্রস্তাব সংবলিত অর্থ বিল-২০২৩ পাস হবে। ১ জুলাই থেকে একাধিক গাড়ির জন্য বাড়তি কর আরোপ শুরু করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

গত ১ জুন সংসদে বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম.মুস্তাফা কামাল বলেন, উন্নত বিশ্বে প্রচলিত জনসাধারণের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাতে কর আরোপের ধারণা থেকে এবং দেশের পরিবেশ দূষণ হ্রাস করার উদ্যোগ হিসাবে একাধিক গাড়ির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সিসি অথবা কিলোওয়াটভিত্তিক পরিবেশ সারচার্জ আরোপ করা হচ্ছে।

সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা এই প্রস্তাব একযোগে সমর্থন করছেন।

বর্তমানে একটি গাড়ির মালিক হওয়ার জন্য বাৎসরিক ২৫ হাজার টাকা কর দিতে হয়।

প্রস্তাব অনুযায়ী, দুটি দেড় হাজার সিসি অথবা ৭৫ কিলোওয়াটের গাড়ি থাকলে প্রথম গাড়ির জন্য ২৫ হাজার এবং দ্বিতীয় গাড়ির জন্য নিয়মিত কর ২৫ হাজার টাকার পাশাপাশি বাড়তি ২৫ হাজার টাকা কার্বন কর দিতে হবে।

দূষণ কমাবে

দূষণ কমাতে সরকারের ঘোষিত এই কর আরোপকে সমর্থন করছেন বিরোধীদলসহ পরিবেশবাদীরা।

তবে ব্যবহারকারীদের অনেকেই বলছেন, ঢাকা শহরে গণপরিবহন ব্যবস্থা সহজ না করে এই কর অনেকের জন্য বোঝা হবে।

“গাড়ির ওপর কার্বন ট্যাক্স আরোপ করা খারাপ নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই এই ব্যবস্থা রয়েছে। এর ফলে কিছু রাষ্ট্রীয় তহবিলে কিছু অর্থ আসবে,” শুক্রবার বেনারকে বলেন সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

দেশে প্রায় সাড়ে ৫৭ লাখ নিবন্ধিত মোটরযানের মধ্যে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের সংখ্যা পাঁচ লাখ ২০ হাজার বলে বেনারকে জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক সীতাংশু শেখর বিশ্বাস।

মোট ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের মধ্যে প্রায় চার লাখ ২৭ হাজার ঢাকা শহরে নিবন্ধিত বলেও জানান তিনি।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে “অনেক পরিবারেই একাধিক গাড়ি রয়েছে” বলে জানালেও কতজনের নামে একাধিক গাড়ি নিবন্ধিত সেব্যাপারে কোনো তথ্য বিআরটিএ’র কাছে নেই বলে জানান সীতাংশু শেখর।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে অনেক পরিবারে চার থেকে পাঁচটা গাড়িও রয়েছে বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিভালপমেন্ট এর উপপরিচালক মিজান আর. খান।

একাধিক গাড়ির ওপর কর ধার্য করার প্রস্তাবটিকে ভালো উদ্যোগ হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “এই পদক্ষেপের ফলে সকল ধনী ব্যক্তিরা গাড়ি বিক্রি করে দেবেন এমন নয়। তবে অনেকেই ভবিষ্যতে একাধিক গাড়ি কেনার আগে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবেন।”

তিনি বলেন, কার্বন কর আরোপ করার কারণে রাষ্ট্র কিছু বাড়তি অর্থ পাবার পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে “যানজট কিছুটা কমে আসবে এবং বায়ু দূষণ কমবে।”

কার্বন কর আরোপের ফলে “জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক আলোচনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল” হবার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বেসরকারি ফান্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে “বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পাবে” বলে মনে করেন মিজান আর. খান।

যাতায়াতের বিষয়টিও ভাবতে হবে

তবে এক নামে একাধিক গাড়ির ওপর করারোপের বিষয়টি ব্যক্তির পরিবর্তে পরিবারভিত্তিক হওয়া উচিত বলে মনে করেন বেসরকারি কর্মকর্তা নাজমূল ইসলাম।

তিনি বলেন, তাঁর ৮০০ সিসির একটি ভারতীয় মারুতি গাড়ি আগে থেকেই ছিল। পরে অফিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লোন নিয়ে আরেকটি নতুন দামি গাড়ি কিনেছেন।

“মারুতি গাড়ির অবস্থা খুব ভালো নয়। এটি আমি বাজার করার কাজে ব্যবহার করি। কারণ এটি ছোট হওয়ায় বিভিন্ন অলিগলিতে নিয়ে যাওয়া যায় এবং পার্ক করা যায়,” বলেন নাজমুল ইসলাম।

অন্যদিকে “পুরো পরিবারের একসাথে যাওয়ার ক্ষেত্রে” অন্য গাড়িটি ব্যবহার করেন জানিয়ে তিনি বলেন, “একাধিক গাড়ির জন্য কর আরোপের সিদ্ধান্ত আমার জন্য বোঝা।”

“সেকারণে গত সপ্তাহে আমি একটি গাড়ি আমার স্ত্রীর নামে মালিকানা পরিবর্তন করেছি,” জানান নাজমূল।

ঢাকায় অনেকে বাধ্য হয়েই একাধিক গাড়ি রাখেন জানিয়ে নজমূল বলেন, পরিবারের পুরুষ সদস্য একটি গাড়ি নিয়ে কাজে চলে যাবার পর বাকি সদস্যদের যাতায়াতের বিষয়টিও ভাবতে হবে।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “ঢাকায় সকালে এবং সন্ধ্যায় কোনো বাসে নারীরা উঠতে পারেন না। এছাড়া, সিএনজি ঠিক মতো পাওয়া যায় না। আবার উবারের গাড়িগুলোও অনেক সময় যেতে চায় না।”

তাই তাঁর মতে, “এই কর ধার্য করার আগে মানুষের চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে মানুষের কাছে ব্যক্তিগত গাড়ির বিকল্প থাকে। সেটি না করে কর ধার্য করা সঠিক ব্যবস্থা নয়।”

নতুন আইন অনুযায়ী গাড়ির সিসি বাড়লে করের পরিমাণও বাড়বে। দুই হাজার সিসি বা ১০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত দ্বিতীয় গাড়ির জন্য ৫০ হাজার টাকা, আড়াই হাজার সিসি বা ১২৫ কিলোওয়াট পর্যন্ত ক্ষমতা সম্পন্ন বাড়তি গাড়ির জন্য ৭৫ হাজার টাকা, তিন হাজার সিসি বা ১৫০ কিলোওয়াট পর্যন্ত ক্ষমতা সম্পন্ন গাড়ির জন্য দেড় লাখ টাকা, সাড়ে তিন হাজার সিসি অথবা ১৭৫ কিলোওয়াট পর্যন্ত ক্ষমতা সম্পন্ন বাড়তি গাড়ির জন্য দুই লাখ টাকা এবং সাড়ে তিন হাজার সিসি অথবা ১৭৫ কিলোওয়াটের বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন দ্বিতীয় গাড়ির জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকা কর দিতে হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।