গাজীর কারখানায় লাগানো আগুনে নিখোঁজ অন্তত ১৭৩: জেলা প্রশাসন

কামরান রেজা চৌধুরী
2024.08.28
ঢাকা
গাজীর কারখানায় লাগানো আগুনে  নিখোঁজ অন্তত ১৭৩: জেলা প্রশাসন গাজী টায়ার ফ্যাক্টরির ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শারীরিকভাবে ভেতরে প্রবেশ করে ভিকটিম অনুসন্ধান করা যাচ্ছে না। তাই ড্রোন ব্যবহার করে বাইরে থেকে ভিকটিম অনুসন্ধান করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ২৮ আগস্ট ২০২৪
[বেনারনিউজ]

প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে যে, দমকল বাহিনীর সহায়তায় ১৭৩ জন নিখোঁজ ব্যক্তির একটি তালিকা করা হয়েছে।

তবে তাঁদের উদ্ধারে বুধবার পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনি দমকল বাহিনীর সদস্যরা।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বুধবার বেনারকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে গাজী টায়ার কারখানার অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ ১৭৩ জনের একটি তালিকা প্রশাসনে পক্ষ থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। তালিকাটি এখনও এটি প্রকাশ করা হয়নি।”

তিনি বলেন, “কারখানাটি একটানা ৩২ থেকে ৩৩ ঘণ্টা আগুনে পুড়েছে। ভবনটি মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণ বলে গনপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, বুয়েটির বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শ ছাড়া ভবনে উদ্ধার কাজ করা যাবে না।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাল বৃহস্পতিবার বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল ভবনটি পরীক্ষা করবেন। এরপরই উদ্ধারকাজ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

জেলা প্রশাসক জানান, গাজী টায়ারের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

a44a39ea-8fb3-4251-a3ab-d9369e984d78.jpg
রূপগঞ্জের গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ২৮ আগস্ট ২০২৪ [বেনারনিউজ]

এদিকে তিন দিন পার হয়ে গেলেও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীরের মালিকানাধীন গাজী টায়ার ও পাইপ কারখানার অগ্নিকাণ্ডে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার অথবা তাঁদের ব্যাপারে কোনও কিছু জানায়নি সরকার।

পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজনরা বুধবার তৃতীয় দিনের মতো রূপগঞ্জের খাদুন এলাকায় অবস্থিত কারখানার আশেপাশে জড়ো হয়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে জানতে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে ধর্ণা দেন।

তাঁরা বলছেন, কারখানার আগুনে পুড়ে যাওয়া ব্যক্তিদের হাড়গোড় পেলেও তাঁরা খুশি হবেন, তবে কিছু জানানো হচ্ছে না।

কারখানায় হামলার ব্যাপারে বিদেশে অবস্থানরত গাজী গোলাম দস্তগীরের ছেলে গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পাকে বার্তা পাঠিয়ে এবং কল করেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি।

গত রোববার গাজী গোলাম দস্তগীর গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার ছয় তলা ভবনের বিশাল কারখানায় আগুন লাগায় দুর্বৃত্তরা, মঙ্গলবার ভোরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

বুধবারও রূপগঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা মানুষ কারখানার আশেপাশে ভিড় করেন। কাপড় ব্যবসায়ী ইকবাল খান তার চাচাতো ভাই নিখোঁজ স্বপন খানের ব্যাপারে জানতে কারখানার কাছে অবস্থান নেন।

তিনি বেনারকে বলেন, রোববার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত তিনি এবং তার বড়পা গ্রামের অনেক মানুষ কারখানার কাছে এসেছেন। ওই গ্রাম থেকে কমপক্ষে ১০ ব্যক্তি কারখানার ভিতর আটকা পড়েন বলে তিনি জানান।

ইকবাল খান বলেন, তাঁর ভাই স্বপন খান (৩৫) ছাড়াও কারখানা ভবনে আটকা পড়া বড়পা গ্রামের ব্যক্তিরা হলেন; ভাগ্নে সাঈদ খান (১৫), আবু সাঈদ ভূঁইয়া (৪৮), আলী আসাদ ভূঁইয়া (৪৩), মো. শাহজাদ শিকদার (২৮) এবং মো. মহসিন ভূঁইয়া (৩০)। তাঁরা সবাই কারখানায় মালামাল লুট করতে অথবা দেখতে গিয়েছিল বলে জানান ইকবাল খান।

তিনি বলেন, “এদের সবাই কারখানার ভিতর আটকা পড়েছে। রোববার রাত সাড়ে ১০টার পরে আবু সাঈদ ভূঁইয়া কারখানার ভিতর থেকে তাঁর পরিবারের সদস্য এবং অন্যান্যদের ফোন করে বের হতে সাহায্য চান। আমি আধ ঘন্টা পর তাঁদের অনেকের ফোনে কল দিলে ফোন বাজে। তবে কেউ রিসিভ করেননি। হয়তো অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর ফোন বন্ধ পাই। হয়তো ফোন আগুনে পুড়ে যায়।”

ইকবাল খান বলেন, “আমার আশঙ্কা, হয়তো তারা কেউই বেঁচে নেই। তবে আমাদের কথা, যদি লাশ না পাওয়া যায় তখন হাড় পেলেও আমরা শান্তি পাবো। তাঁদের দাফনের ব্যবস্থা করা যাবে।”

তিনি বলেন, যখন মানুষ কারখানায় লুটতরাজ চালাচ্ছিল তখন এক গ্রুপ সশস্ত্র ব্যক্তি মুল ফটকে আগুন লাগিয়ে চলে যায়। এতে আটকা পড়েন সবাই।

দমকল বাহিনীর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. মাইন উদ্দিন বুধবার বেনারকে বলেন, দমকল বাহিনীর সদস্যরা এখনও কারখানার ভিতরে প্রবেশ করতে পারেননি। বাইরে থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “ভবনটি যে কোনো মুহুর্তে ভেঙে পড়তে পারে। সেকারণে আমরা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছি। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিলে আমাদের উদ্ধারকারীরা ভবনের ভিতর প্রবেশ করবেন।”

দমকল বাহিনী কেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশ করছে না-এমন প্রশ্নের জবাবে দমকল বাহিনীর মূখপাত্র শাহজাহান শিকদার বুধবার বেনারকে বলেন, “আমাদের সদস্যরা উদ্ধার কাজে মনোনিবেশ করেন। তাঁরা তালিকা করতে সহায়তা করে থাকতে পারে। তবে আমরা কোন তালিকা প্রস্তুত করিনি।”

তিনি বলেন, “উদ্ধার কাজের সময় কোনও ব্যক্তিকে পাওয়া গেলে তাঁদের তালিকা ও পরিচয় আমরা প্রকাশ করে থাকি।”

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বুধবার বেনারকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উচিত ছিল স্বচ্ছতার জন্য নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করা।

“যদিও তাদের অনেকে লুট করতে গিয়েছিলেন, তবুও সরকারের উচিত ছিল তাদের পরিচয় প্রকাশ করা। তিন দিন পার হয়েছে কিন্তু পরিবারের সদস্যরা জানেন না আটকে পড়া ব্যক্তিদের ভাগ্যে কি ঘটেছে। তাঁদের জানার অধিকার আছে,” বলে তিনি।

নূর খান আরও বলেন, “ভবনের ভিতের আটকে পড়া ব্যক্তিরা বেঁচে আছেন এটি ভাবা অযৌক্তিক হবে। এমনকি তাদের দেহও অঙ্গার হয়ে গেছে হয়তো। এই অবস্থায় তাদের পরিচয় পেতে সরকারের উচিত একটি ফরেনসিক পরীক্ষা করা।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।