আকস্মিক বন্যায় আট জেলায় পানিবন্দি লাখো মানুষ
2024.08.21
ঢাকা
ভারতের আসাম-ত্রিপুরা থেকে উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে তৈরি আকস্মিক বন্যায় বাংলাদেশর অন্তত আট জেলায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
মৌসুমি বায়ুর কারণে আরো অন্তত দুদিন ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
“দীর্ঘমেয়াদী বন্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা না থাকলেও মৌসুমি বায়ু অব্যাহত থাকায় কোথাও কোথাও অতি ভারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হবে। এ কারণে বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা স্বল্প সময় স্থায়ী হতে পারে,” বুধবার বেনারকে বলেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।
টানা বৃষ্টির পাশাপাশি উজানের বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চলে অস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টি হতে পারে বলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা।
তিনি বলেন, বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে বিভিন্ন জেলায় সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। পানিবন্দি মানুষ উদ্ধারে মনিটরিং সেল চালু করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
সরকারের পক্ষ থেকে বুধবার বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যা আরও নতুন নতুন অঞ্চলে বিস্তৃত হতে পারে।
এদিকে দুর্বল বাঁধের কারণে পানির নিম্নাঞ্চলে পানির ঢল থামানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত।
“আমাদের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। বন্যা না হওয়ার জন্য যে বাঁধের দরকার তা অনেক আগে বানানো হলেও রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় বেশিরভাগ বাঁধ কাজে আসছে না, পানির ঢল থামানো সম্ভব হচ্ছে না,” বেনারকে বলেন তিনি।
পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ
প্রবল বৃষ্টিতে নোয়াখালীর নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটি প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে বেনারকে জানান জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান।
“সব স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছেন,” জানিয়ে তিনি বলেন, “পানি নামছে না। তার ওপর আরো বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি খারাপ হবে।”
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, জুড়ী, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গিয়ে দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক সালেহ এলাহী কুটি।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আটটি স্থান দিয়ে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মনু নদীরও বাঁধ ভেঙে গেছে। ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টি হওয়ায় নদ-নদীতে পানি বেড়েছে।”
ফেনীর ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কসহ স্থানীয় সব গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তর (আইএসপিআর) বুধবার জানায়, ফেনী জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যার্তদের উদ্ধারে মোতায়েন হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে স্পিড বোট ও হেলিকপ্টার।
ফেনী ব্যাটালিয়ন ৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত দুই দিনের ভারি বর্ষণে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে জেলার পরশুরাম, ছাগলনাইয়া এবং ফুলগাজী উপজেলার প্রায় ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
“সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বিজিবি নৌকা ও ট্রলারের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়স্থানে নিয়ে আসছে। পাশাপাশি উদ্ধারকৃত জনসাধারণের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও জরুরি শুকনো খাবার বিতরণ করছে বিজিবি,” বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
টানা বর্ষণ ও হালদা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা ও আশপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৩ লাখ মানুষ বন্যার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ব্যবস্থা
বন্যা আক্রান্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যেসব স্থানে বাঁধ ভেঙেছে সেগুলোতেও কাজ চলছে বলে জানান তাঁরা।
দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে বলে বুধবার বেনারকে জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
“আশা করি বন্যার পানি দ্রুতই নেমে যাবে,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পানি নেমে যাওয়ার পর বোঝা যাবে।”
তিনি বলেন, “পানি নেমে যাওয়ার পরে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
এদিকে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ নাহিদ ইসলাম বুধবার সচিবালয়ে সভায় বলেন, চারিদিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে মানুষ যাতে এগিয়ে আসে সেজন্য গণমাধ্যমকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।