বন্যায় ১০ জেলায় আক্রান্ত ৩৬ লাখ

ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে তৈরি বন্যায় বাংলাদেশের ১০ জেলার প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

আকস্মিক এই বন্যার বিষয়ে কোনো পূর্বাভাস ছিল না বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “উজান থেকে হঠাৎ করেই ঢল নামে।”

সরকারের তথ্য বিবরণী অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলো কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট ও লক্ষ্মীপুর।

“আমাদের বাসার সামনের রাস্তায় গলা পানি। এক তলা বাড়ি প্রায় ডুবে গেছে। এলাকায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই,” বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন খাগড়াছড়ি শহরের বাসিন্দা ডিসেন্সি চাকমা।

“আশেপাশে একতলা ভবনে যারা আছে তারা আমাদের ভবনের দোতালা-তিন তলায় এসে উঠেছে,” জানিয়ে তিনি বলেন, “সবাই একসাথে খুবই কষ্ট করে বিপদের সময় পার করছি।”

18.jpg
বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া বাড়িঘর ছেড়ে নৌকা ও ভেলায় করে আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন ফেনীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। ছবিটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী জেলার অংশ থেকে তোলা। ২২ আগস্ট ২০২৪। [মিনহাজ উদ্দিন//বেনারনিউজ]

দুজনের মৃত্যু

বন্যার পানিতে ডুবে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় একজন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ১০ জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয় দিতে দুই হাজারের বেশি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারত নদীর বাঁধ খুলে দেয়ায় এই আকস্মিক বন্যা হয়েছে, যা অমানবিক।

তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, নদীর বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে নয়, গোমতী নদীর অববাহিকা এলাকায় বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ায় বাঁধের ভাটির দিকের পানির প্রবাহের কারণে বাংলাদেশে বন্যা হয়েছে।

14.jpg
ফেনীর লালপোল এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পারাপারের জন্য দড়ি বেঁধে দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। ২২ আগস্ট ২০২৪। [মিনহাজ উদ্দিন/বেনারনিউজ]

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা সাংবাদিকদের জানান, “আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টি কমে আসতে পারে।”

পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বিভিন্ন উপদ্রুত এলাকায় বন্যার্তদের উদ্ধারে কাজ করছেন সেনা সদস্যরা। পাশাপাশি, চিকিৎসা সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল টিমও মোতায়েন করা হয়েছে।

08.jpg
ফেনীতে বন্যার পানিতে ডোবা রাস্তায় ট্রাকে করে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন এক দল মানুষ। ২২ আগস্ট ২০২৪। [এএফপি] (AP)
23.jpg
ফেনী সদর উপজেলার আবুপুর এলাকায় বন্যার পানিতে ডোবা রাস্তায় শিশুকে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে একটি পরিবার। ২২ আগস্ট ২০২৪। [বেনারনিউজ]
10.jpeg
বন্যার্তদের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। ২২ আগস্ট ২০২৪। [মো: হাসান/বেনারনিউজ]
13.jpg
বন্যার পানিতে বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় ফেনীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে তাঁবু টানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক মানুষ। ২২ আগস্ট ২০২৪। [মিনহাজ উদ্দিন/বেনারনিউজ]
21.jpg
হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করায় ফেনী সদর উপজেলার সরিষাবাড়ি হাই স্কুলে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুও আশ্রয় নিয়েছে। ২২ আগস্ট ২০২৪। [বেনারনিউজ]
04.jpg
আকাশ থেকে তোলা কুমিল্লার একটি বন্যা আক্রান্ত এলাকা। ২২ আগস্ট ২০২৪। [এএফপি] (MAHFUZUL HASAN/AFP)