ভারি বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় দুইদিনে বাংলাদেশে ১০ জনের মৃত্যু

আহম্মদ ফয়েজ
2023.10.06
ঢাকা
ভারি বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় দুইদিনে বাংলাদেশে ১০ জনের মৃত্যু লালমনিরহাটের একটি গ্রামে বন্যায় ডোবা রাস্তায় চলাচল করছেন কয়েকজন বাসিন্দা। ৬ অক্টোবর ২০২৩।
[বেনারনিউজ]

ভারি বর্ষণ এবং প্রতিবেশী ভারতের সিকিম থেকে আসা বন্যার পানিতে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা প্লাবিত হবার পাশাপাশি অন্য এলাকায় জলাবদ্ধতার ফলে গত দুই দিনে অন্তত মারা গেছেন দশ জন।

রংপুর অঞ্চলের জেলাগুলো প্লাবিত হওয়ায় শুক্রবার পর্যন্ত ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার সারাদেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সামান্য কমেছে, শনিবার থেকে আরো কমার সম্ভাবনা থাকলেও দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বেনারকে জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক স্থানে এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

দুইদিনে ১০ মৃত্যু

আকস্মিক বন্যা ও ভারি বৃষ্টিপাতসহ বৈরী আবহাওয়া বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০ জন। তাদের মধ্যে ৯ জনই মারা গেছেন শুক্রবার।

স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, পৃথক ঘটনায় গাজীপুরে একই পরিবারের দুই সদস্যসহ মারা গেছেন তিনজন।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও এলাকায় একই পরিবারের দুইজন এবং হবিগঞ্জে একজন কৃষক বজ্রপাতে মারা গেছেন শুক্রবার।

এদিকে ময়মনসিংহ শহরের ব্রাহ্মপল্লী এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন ৬৫ বয়সের এক বৃদ্ধ।

লালমনিরহাটে বানের জলে ভেসে গেছে ছয় বছরের এক শিশু এবং কুড়িগ্রামে ৫৪ বছর বয়সী এক নারী।

প্রতিটি মৃত্যুর সংবাদ বেনার স্থানীয় পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে।

ভারত থেকে ভেসে আসলো ৫ লাশ

ভারতের উত্তর সিকিমে অতি বর্ষণে বুধবার সেখানকার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ ভেঙে সৃষ্টি হওয়া বন্যা পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে।

ওই বাঁধ ভেঙে তিস্তার পানি বেড়ে বাংলাদেশের লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে।

ভারতের কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছে অসময়ের এই বন্যায় শুক্রবার পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ভারতীয় প্রভাবশালী গণমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস ধারণা করছে সিকিমে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে, কারণ সেখানে ১৫ সেনাসদস্যসহ শতাধিক মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

এদিকে গত দুইদিনে তিস্তা অববাহিকা থেকে এক ভারতীয় সেনা সদস্যসহ পাঁচটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

পানির স্রোত বিবেচনায় পুলিশ ধারণা করছে মৃতদের সবাই সিকিম থেকে বানের জলে ভেসে এসেছে।

পরিচয় শনাক্ত হওয়া ভারতীয় সেনা সদস্যের লাশটি বৃহস্পতিবার উদ্ধারের পর শুক্রবার পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ।

পুলিশ জানিয়েছে, লালমনিরহাট সদর থানা এলাকায় দুইটি, হাতিবান্ধা থানা একটি, রংপুরের গঙ্গাচড়া ও নীলফামারীর ডিমলা থানা পুলিশ একটি করে মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে গত দুই দিনে।

লালমনিরহাট সদর থানার ওসি সুমন ফারুক বেনারকে বলেন, শুক্রবার সকালে খুনিয়াগাছ পাকার মাথা এলাকায় তিস্তার চরে অজ্ঞাত এক যুবক ও একটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে লাশগুলো হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।

“তিস্তায় ভেসে আসা মরদেহগুলো ভারতীয় নাগরিকদের বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এসব লাশ হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় আলোচনা চলছে,” বেনারকে বলেন রংপুর রেঞ্জের পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক আব্দুল বাতেন।

গত বুধবার বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিতি ভারতের সিকিমে এই আকস্মিক বন্যার সূত্রপাত হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সিকিমে গত ৫০ বছরে এরকম দুর্যোগ হয়নি।

এই বন্যার ফলে তিস্তার নদীর পানির উচ্চতা হঠাৎ করে তিন থেকে চার ফুট বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পরিস্থিতি বিবেচনায় নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদ্দৌলা বেনারকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে দেখা গেছে, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপরে।

সিকিমে ভারি বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর চুংথাং বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হয়েছে বলেই এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

দুর্ভোগ চরমে

ভারি বৃষ্টিতে ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নাগরিক দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় ঢাকার অনেক রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।

টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ময়মনসিংহ ও রাজশাহী শহরের বহু এলাকা। শহরগুলোতে জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নগরের বাসিন্দারা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।