আলোচিত তিন বই প্রদর্শন না করার শর্তে বইমেলায় অংশ নিতে রাজি আদর্শ প্রকাশনী
2023.02.07
ঢাকা
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ নানা প্রাতিষ্ঠানিক নীতির সমালোচনা করে লেখা আলোচিত যে তিনটি বই নিয়ে বাংলা একাডেমি আপত্তি জানিয়েছে সেগুলো স্টলে না রাখার শর্তে অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় অংশ গ্রহণের সুযোগ পেতে যাচ্ছে আদর্শ প্রকাশনী।
আদর্শ প্রকাশনীর পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত শুনানিতে বিচারক প্রশ্ন রাখেন, “যে তিনটি বই নিয়ে বাংলা একাডেমি আপত্তি জানিয়েছে ওই বইগুলো বাদ রেখে আদর্শ প্রকাশনীকে বইমেলায় স্টল বরাদ্দ দিলে সমস্যা কোথায়? আমরা মনে করি সমস্যা থাকার কথা নয়।”
আদালতের এই বক্তব্য তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক বেনারকে বলেন, “রিটের শুনানিকালে আদালত থেকে বলা হয়েছে যে তিনটি বইয়ে বাংলা একাডেমি আপত্তি জানিয়েছে সেগুলো স্টলে রাখা হবে না- এই মর্মে মুচলেকা দাখিল করতে হবে। বই তিনটিও আদালতে দাখিল করতে হবে।”
“আদালতের এই নির্দেশ মানলে স্টল বরাদ্দ পেয়ে যাবে আদর্শ,” বলেন অনীক।
তিনি জানান, মঙ্গলবার শুনানি শেষে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দের বিষয়ে চূড়ান্ত আদেশের জন্য বুধবার দিন ধার্য করেছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ। তিনি আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে আপত্তি জানান।
সেলিম আজাদ বেনারকে বলেন, “আদালতের সিদ্ধান্তক্রমে ওই বইগুলো না নেয়ার অঙ্গীকারের আলোকে আদর্শ মেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে। প্রকাশনা সংস্থাটি ইতোমধ্যে বই তিনটি আদালতে জমা দিয়ে দিয়েছে। এর মাধ্যমে চলমান এই সমস্যার অবসান হবে।”
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আদালতের লিখিত আদেশ না পাওয়ায় মন্তব্য করতে চাননি আদর্শ প্রকাশনীর কর্ণধার মাহাবুব রহমান। তবে তিনি মেলায় অংশ নিতে চান বলে জানান।
‘সুযোগ পেলে মেলায় যাবে আদর্শ প্রকাশনী’
আদর্শ প্রকাশনীর আইনজীবী জানান, ফাহাম আব্দুস সালামের লেখা ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ বইটির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আপত্তি তুলে মেলায় আদর্শকে স্টল বরাদ্দ না দেয়ার প্রেক্ষিতে, আলোচিত তিনটি বই বাদ দিয়ে মেলায় স্টল চেয়েও প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল আদর্শ।
গত ২২ জানুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা একাডেমি জানায়, অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩ পরিচালনা কমিটি ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ বইটি পড়ার পর একে বইমেলার ‘নীতিমালা ও নিয়মাবলী’ এর আলোকে শর্তাবলী পূরণে সক্ষম নয় বলে গণ্য করেছে।
এতে আরও বলা হয়, বইটিতে বাঙালি জাতিসত্তা, বিচার বিভাগ, বিচারপতি, দেশের সংবিধান, সংসদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে “অশ্লীল, রুচিগর্হিত, কটাক্ষমূলক বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে।”
আদর্শ প্রকাশনীর আলোচনায় থাকা অপর দুইটি বই হচ্ছে- জিয়া হাসানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’ এবং ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’।
এর প্রেক্ষিতে গত ২ ফেব্রুয়ারি আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেয়ার সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে প্রকাশনীটি, মঙ্গলবার এর ওপর শুনানি হয়।
“ওই তিনটি বই ছাড়া অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলে মেলায় যাবে আদর্শ প্রকাশনী,” বেনারকে বলেন আইনজীবী অনীক।
তিনি বলেন, ওই তিনটি বই ছাড়াও কয়েক ডজন লেখকের কয়েকশত বই প্রকাশ করেছে আদর্শ প্রকাশনী। সেই বিবেচনায় লেখক ও পাঠকদের প্রতি দায় থেকে মেলায় অংশ নিবে আদর্শ।
এর আগে বেনারের সঙ্গে আলাপকালে এই তিন বইয়ের লেখক বলেছিলেন, তাঁদের বই না প্রদর্শনের শর্তে হলেও আদর্শকে মেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হোক।
চট্টগ্রামেও নেই আদর্শ প্রকাশনী
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আয়োজনে বুধবার বন্দরনগরীতে শুরু হচ্ছে একুশের বইমেলা। এই মেলায় ঢাকার ৫০টি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিচ্ছে। তবে আবেদন করেও স্টল বরাদ্দ পায়নি আদর্শ প্রকাশনী।
কী কারণে আদর্শকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়নি তা জানানো হয়নি প্রকাশনীটিকে।
“ঠিক কী কারণে চট্টগ্রামের মেলায় আমাদের স্টল দেয়া হয়নি তা আমাদের জানানো হয়নি। তবে আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ঢাকায় আমাদের স্টল দেয়া হয়নি বলেই চট্টগ্রামে দেয়া হয়নি,” বলেন আদর্শের প্রকাশক মাহাবুব।
চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে আয়োজিত মাসব্যাপী এই মেলা আয়োজনে সহযোগিতা করে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদ।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং মেলার স্টল বরাদ্দ কমিটির সচিব আলী প্রয়াস গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে ৮৯টি প্রকাশনা সংস্থা আবেদন করলেও স্থান স্বল্পতার কারণে ৫০টির বেশি প্রকাশনাকে অনুমোদন দেয়া হয়নি।