চলে গেলেন কিংবদন্তী সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

আহম্মদ ফয়েজ
2022.05.19
ঢাকা
চলে গেলেন কিংবদন্তী সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ঢাকার চামেলীবাগে রাজনীতিবিদ ও লেখক মোনায়েম সরকারের বাসায় একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনী অনুষ্ঠানে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯।
[সৌজন্যে: দীপন নন্দী]

বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের সাথে মিশে আছে যে গান, মহান একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরির সময় লাখো কণ্ঠে বেজে ওঠে যে গান, সেই ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আর নেই।

বৃহস্পতিবার লন্ডনের স্থানীয় সময় আনুমানিক সকাল সাতটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদকজয়ী ৮৮ বছর বয়সী সাংবাদিক ও সাহিত্যিক গাফ্ফার চৌধুরী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গণমাধ্যমকে এই খবর নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম।

স্বাধীনতাযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক জয় বাংলার প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন তিনি।

ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে আমৃত্যু সত্যের সন্ধান করেছেন তিনি। তাঁর রচিত প্রবন্ধ আলোড়িত করেছে অসংখ্য পাঠককে। তাঁর লেখায় তিনি মেলে ধরেছেন ইতিহাস ও রাজনীতির অনেক অজানা অধ্যায় এবং নির্মোহ বিশ্লেষণ করেছেন বহু সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি।

গাফ্ফার চৌধুরী সম্পৃক্ত ছিলেন ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণের প্রতিটি পদক্ষেপে। অন্যদিকে সাংবাদিকতার সমান্তরালে নিযুক্ত ছিলেন সাহিত্য চর্চায়। লিখেছেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সাক্ষ্যবহ সেই কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। শুধু গান নয়, লিখেছেন গল্প-উপন্যাস, কবিতা ও নাটকও।

গাফ্ফার চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন যুক্তরাজ্য যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল আহমেদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “গাফ্ফার চৌধুরীর ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর লাশ বাংলাদেশে পাঠানো হবে। কারণ তিনি দেশের মাটিতেই সমাহিত হবার ইচ্ছা জানিয়ে গেছেন।”

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেছেন।

এছাড়াও জাতীয় সংসদের স্পিকার, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের বিশিষ্টজনেরা গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

তিনি একক আর স্বতন্ত্র ছিলেন

গাফ্ফার চৌধুরীর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে মূল্যায়ন জানতে চাইলে কবি ও অধ্যাপক খালিদ হোসাইন বেনারকে বলেন, “জন্ম-মৃত্যুর ছোট্ট আয়তনে আবদুল গাফফার চৌধুরীর জীবনকে বেঁধে রাখা যাবে না কখনো। বিপদে বিপর্যয়ে চেতনার আলোকিত ঐশ্বর্যকে কখনো সামান্য ম্লান হতে দেননি তিনি।”

অনুভূতির সততা, জীবন-যাপনের সক্রিয়তা, প্রাণবন্ত প্রাণের অনিঃশেষ বিস্তার, চিন্তা ও আদর্শ তাঁকে গণমুখী ও প্রগতিশীল চেতনার ধারক করে তুলেছে, বলেন খালিদ।

“আমাদের ভাষা আন্দোলন এবং তার পরবর্তী সকল প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-সংগ্রামে সংলগ্ন হয়ে ছিলেন তিনি। আলতাফ মাহমুদের সুরে ‘আমার ভাইয়ে রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র মাধ্যমে তিনি প্রতিটি বাঙালির চিত্তে সহজে প্রবেশ করে চিরস্থায়ী জায়গা করে আছেন,” যোগ করেন খালিদ।

শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. বিপ্লব বালা বেনারকে বলেন, “গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী রেনেসাঁ-মানব। শেষদিন পর্যন্ত ন্যায্য কথা বলতে ছাড়েননি তিনি কাউকে।”

১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর ব্রিটিশ শাসনামলে তৎকালীন অবিভক্ত ভারতে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন গাফ্ফার চৌধুরী। ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৭৪ সালের ৫ অক্টোবর ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানেই তিনি স্থায়ী হন।

ব্রিটেনে যাওয়ার আগে তিনি ঢাকার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি জয় বাংলা, যুগান্তর ও আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করেন।

যুক্তরাজ্যে নতুন দিন নামে একটি সংবাদপত্র চালু করেন তিনি।

১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০০৯ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। এ ছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমি পদক, স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, ইউনেস্কো সাহিত্য পুরস্কার ও বঙ্গবন্ধু পদক লাভ করেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।