পাঁচ দিনে বন্ধ প্রায় দেড় হাজার অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক
2022.05.31
ঢাকা
যথাযথ অনুমোদন ছাড়া চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর অভিযোগে পাঁচ দিনে দেশজুড়ে প্রায় দেড় হাজার অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ৩৩৪টি অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করা হয়েছে।
বন্ধ করে দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিভাগে ২৮৬টি, চট্টগ্রামে ২১২টি, রাজশাহীতে ১৯৩টি, রংপুরে ৭৩টি, ময়মনসিংহে ১৪৭টি, বরিশালে ৬৫টি, সিলেটে ৪৭টি ও খুলনায় ৩১১টি।
যেসব হাসপাতাল বা ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেগুলো যদি সঠিক নিয়ম-কানুন মেনে আসে, তাহলে আবার খুলে দেয়া হবে বলে বেনারকে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অধ্যাপক ডা. বেলাল হোসেন।
হঠাৎ করে কেন এই অভিযান শুরু হলো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা হঠাৎ করে অভিযান নয়। কোভিড পরিস্থিতির কারণে অভিযান কিছুটা শিথিল ছিল। এখন তা আবার জোরদার করা হয়েছে এবং এই অভিযান চলমান থাকবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযানে অংশ নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করেছে বলেও জানান বেলাল।
অবৈধভাবে পরিচালিত হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে “আমাদের আপত্তি নেই,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া।
তবে তাঁর মতে, যেহেতু হাসপাতালে রোগীরা থাকেন, সেহেতু যেকোনো হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করার আগে একবার নোটিশ দেওয়া উচিত।
গত ২৬ মে এক সভায় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সব অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সভায় দেশের অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করাসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়।
এ সময়ের মধ্যে ক্লিনিক বন্ধ করা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয় এবং সে অনুযায়ী ৭২ ঘণ্টা পর শুরু হয় অভিযান।
‘স্বচ্ছতা থাকলে অবৈধ হাসপাতালের জন্ম হতো না’
“রাষ্ট্র ও সরকার যদি নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পারত এবং স্বাস্থ্য খাতের কার্যক্রমে যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকত তাহলে এই বিপুল সংখ্যক অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিকের জন্ম হতো না,” মনে করেন স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ডা. রশিদ-ই-মাহবুব।
অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধের এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “শুধু বন্ধ করে দিলেই হবে না, খেয়াল রাখতে হবে আবার কদিন পর যাতে করে এই প্রতিষ্ঠানগুলো আগের মতোই চালু না হয়ে যায়।”
তদারকির জন্য প্রয়োজনে আলাদা প্রতিষ্ঠান অথবা স্বাস্থ্য অধিদফতরে লোকবল বাড়ানোর তাগিদ দেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রশিদ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে অনলাইন পদ্ধতিতে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু হয়।
তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত নিবন্ধনের আওতায় আসেনি সব বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
এর আগে ২০২০ সালের ২৩ আগস্টের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন না করলে হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে সময় করোনা মহামারি শুরু হলে থেমে যায় অভিযান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৬৩৯। এর মধ্যে আছে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জেলা বা সদর হাসপাতাল, মাতৃ ও শিশুসদন, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বিশেষায়িত হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে মোট শয্যাসংখ্যা ৬৭ হাজার ৭৩৫।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিবন্ধিত বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৭৭। এসব ক্লিনিক ও হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৯৪ হাজার ৩৯০।
এর বাইরে সারা দেশে নিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা রোগনির্ণয় কেন্দ্র আছে ১০ হাজার ৭২৭টি ও ব্লাড ব্যাংক আছে ১৪০টি।