তাপপ্রবাহ: প্রাথমিকের পর এবার মাধ্যমিক স্কুলও বন্ধ
2023.06.07
ঢাকা

সারা দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর এবার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দাখিল মাদ্রাসা বন্ধ করেছে সরকার।
বুধবার এ সংক্রান্ত পৃথক আদেশ জারি করে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
তীব্র গরমে কুমিল্লায় ছাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন এমন খবর প্রকাশের পরদিনই সরকারের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত জানানো হলো। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সারা দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং দাখিল মাদ্রাসার ক্লাস বন্ধ থাকবে।
ফলে বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার—তিন দিনের একটানা ছুটি থাকবে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এর আগে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
বুধবারও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গরমে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সোয়া তিন কোটি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারা দেশে চলমান তাপপ্রবাহ আরও পাঁচ-ছয় দিন চলতে পারে। গত কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন জেলার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ছিল।
মঙ্গলবার সৈয়দপুরে তাপমাত্রা ৪০ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে।
বুধবার রাজশাহীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে এবং ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি।
বিদ্যুতের অভাবে শিক্ষা কার্যক্রম বিপর্যস্ত
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার অন্যতম কারণ হলো, বিদ্যুৎ বিভ্রাট। তীব্র গরমের মধ্যে বৈদ্যুতিক পাখা ছাড়া লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় প্রতি এক ঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। ফলে বিদ্যালয় ও বাসা-বাড়িতে গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত মানুষের।
দক্ষিণ বনশ্রী মডেল স্কুল ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সনত কুমার ঘোষ বুধবার বেনারকে বলেন, “বিদ্যুতের অভাবে আমাদের বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা সকাল ৯টার দিকে বাসা থেকে স্কুলে আসে। এর আধা ঘণ্টা পরে বিদ্যুৎ চলে যায়। ঢাকা শহরের শিক্ষার্থীরা গরম সহ্য করতে পারে না। তাদের অনেকের বাড়িতেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে।”
সনত কুমার ঘোষ বলেন, “ক্লাসে বসার পর গরমে শিক্ষার্থীদের জামা-কাপড় ভিজে যায়। এক ঘণ্টা পর যখন বিদ্যুৎ আসে তখন সেগুলো আবার তাদের গায়ে শুকায়। এভাবে অনেক শিক্ষার্থী ঠাণ্ডা-জ্বরে ভোগে।”
তিনি বলেন, “ক্লাসে শিক্ষার্থীরা গরমে ছটফট করতে থাকে। লেখাপড়ার প্রতি কোনো প্রকার মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।”
ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে লোডশেডিং অনেক বেশি। গরমে সেখানকার শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার পালসা কৃষণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক খোরশেদ আলম বেনারকে বলেন, “বিদ্যালয় বন্ধ করা একটি ভালো সিদ্ধান্ত। শিক্ষার্থীরা গরমে বসে পর্যন্ত থাকতে পারে না-লেখাপড়া তো দূরের কথা।”
“সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টায় রোদের মধ্যে অ্যাসেম্বলি। এরপর ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একটানা ক্লাস চলে। এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। আমরা গরমে অতিষ্ঠ,” বলেন তিনি।
খোরশেদ আলম বলেন, “আমাদের এক ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩০ থেকে ১৪০ জন। ফলে গাদাগাদি করে ক্লাস করে শিক্ষার্থীরা।”

লোডশেডিং প্রায় দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জনসংযোগ পরিচালক শামীম হাসান বুধবার বেনারকে বলেন, “বুধবার দুপুর ১২টায় দিনের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। তবে চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৪০৭ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হচ্ছে দুই হাজার ৩৮০ মেগাওয়াট।”
শামীম হাসান বলেন, “কয়লার অভাবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। সে কারণে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।”
তিনি জানান, পায়রা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বুধবার বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমানে যে বিদ্যুৎ সংকট চলছে সেটি মূলত ডলার সংকটের কারণে হচ্ছে। সরকার যদি কোম্পানিগুলোকে অর্থ পরিশোধ করে তবেই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে। কারণ আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট।”
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্পূরক বাজেট পাসের সময় মঙ্গলবার প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সংসদে বলেন, “বর্তমান বিদ্যুৎ সমস্যা ১৫ দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।”
তিনি জানান, এ বছর রাষ্ট্রকে বিদ্যুৎ খাতে ২৬ থেকে ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।
এদিকে সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক স্থানে এবং দেশের অন্য সাত বিভাগের দু’এক স্থানে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য বন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।