ভারতের কর্ণাটকে হিজাব নিষিদ্ধ: ঢাকায় ইসলামী আন্দোলনের প্রতিবাদ সমাবেশ
2022.02.18
ঢাকা
ভারতের কর্ণাটকে স্কুল ছাত্রীদের হিজাব নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে ঢাকায় আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নামে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতারা দেশের জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে নিন্দা প্রস্তাব আনার দাবি জানিয়েছেন।
নারীদের হিজাব বিষয়ে প্রতিবাদ হলেও ওই সমাবেশে কোনো নারী উপস্থিত ছিলেন না।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন বলে বেনারকে জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। যদিও ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করা একাধিক পুলিশের ধারণা, এই সংখ্যা ছয় থেকে সাত হাজার হতে পারে।
মুখপাত্র বলেন, “ভারতের কর্ণাটকে স্কুল ছাত্রীদের যেভাবে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। মানুষ হিসেবে ভারতের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছি আমরা। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে সঠিক উপায়ে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে সরকারের প্রতিও আহবান জানিয়েছি আমরা।”
জুমার নামাজের পরে পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী ইসলামী আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এরপর মিছিল নিয়ে বিজয়নগর পার হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়ের কাছাকাছি গেলে পুলিশ বাধা দেয়। সেখানে মিছিল শেষ করেন বিক্ষোভকারীরা।
মিছিলে ভারতে কর্ণাটক রাজ্যে হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদে স্লোগান দেয়া হয়।
সমাবেশে কোনো নারী ছিলেন না
হিজাব নিয়ে কর্মসূচি হলেও ইসলামী আন্দোলনের এই সমাবেশে কোনো নারী উপস্থিত ছিলেন না। বিষয়টি স্বীকার করে আতাউর রহমান বলেন, “সাধারণত আমাদের কোনো বিক্ষোভ সমাবেশ বা মিছিলে নারীরা অংশ নেন না। এটাই আমাদের রেওয়াজ। নারীরা ঘরোয়া বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নেন। আমরাও চাই না নিতান্ত বাধ্য না হলে তারা রাজপথে নামুক। আমরা তো তাদের হয়েই প্রতিবাদ করছি।”
নারীর স্বাধীনতায় বিশ্বাস না করে শুধু হিজাবের পক্ষে ইসলামী আন্দোলনের এই অবস্থান সাম্প্রদায়িকতার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকেরা।
নারী উন্নয়ন সংগঠক ও মানবাধিকারকর্মী খুশি কবীর বেনারকে বলেন, “ভারতের কর্ণাটকে হিজাব নিষিদ্ধের ঘটনাকে দুঃখজনক। তবে এই ইস্যুতে ইসলামী আন্দোলনের এই বিক্ষোভ সমাবেশ প্রমাণ করে তারা খুবই সাম্প্রদায়িক একটা গোষ্ঠী। তারা নারী বিদ্বেষী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। ধর্মকে ব্যবহার করে তারা নারীকে পিছিয়ে রাখতে চায়।”
“তা না হলে যেভাবে তারা মুসলমানদের হিজাব ইস্যুতে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, একইভাবে যখন এদেশে অন্য ধর্মাবলম্বীরা হামলার শিকার হয় বা পাকিস্তানে খ্রিস্টানরা হামলার শিকার হয় তখন কেন প্রতিবাদ করে না?” প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ভারতের কর্ণাটকের উদুপি জেলায় একটি সরকারি কলেজে গত ৩১ ডিসেম্বর পোশাক ক্লাস চলাকালে হিজাব বা নেকাব পরারে উপর এক বিধিনিষেধ দেওয়া হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সেদিনই মুসলিম শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করেন। ধীরে ধীরে এই প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। হিজাব পরার পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ অনেক জায়গায় সহিংস রূপ নেয়। হিজাব নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়া উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে। ইস্যুটি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
ভারত অভিমুখে যাত্রার হুমকি
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, “ভারত বোরকা, হিজাব নিষিদ্ধ করেছে। সেখান থেকে ইসলামকে বিদায় দেয়ার চক্রান্ত করছে।”
তিনি বলেন, “যদি ভারত সরকার হিজাব পরায় বিধিনিষেধ না তুলে নেয়, তাহলে বাংলাদেশ থেকে আমরা প্রয়োজনে ভারতের দিকে যাত্রা শুরু করব।”
এ সময় তিনি গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আলেমদের মুক্তি দাবি করেন।
মদ ও দ্রব্যমূল্য ইস্যু
দেশে মদ পান ও বিক্রিতে অবাধ অনুমতি দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তোলেন বক্তারা। তেল, গ্যাস, পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদও জানানো হয় ওই বিক্ষোভ সমাবেশে।
সম্প্রতি প্রণীত সরকারের ‘অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২২’ এ বলা হয়েছে, ২১ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তিকে মদ পানের অনুমতি দেয়া যাবে না। এর বেশি বয়সী যে কেউ অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে মুসলিমদের ক্ষেত্রে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদমর্যাদার কোনো ডাক্তারের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ফয়জুল করীম বলেন, “কোরআন ও ইসলাম যেহেতু মদকে নিষিদ্ধ করেছে, আমাদের উচিত সরকারের এই চেষ্টার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আন্দোলন গড়ে তোলা।”
এ প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, “কোরআনে মদকে হারাম বলা হয়েছে। আপনারা কোরআনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন, আর এ দেশের মুমিনরা বসে থাকবে এটা ভাবলে চলবে না। আল্লাহপাকের বিধান ধরে রাখার জন্য এ দেশের মানুষের রক্ত ঝরবে, জীবন দেবে।”
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়া প্রসঙ্গে ফয়জুল করীম বলেন, “প্রতি মাসে গ্যাস ও তেলের দাম বাড়ছেই। পানি ও চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। মানুষ কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবে সেই চিন্তা সরকারের নেই।”