দুই বছর পর আবার চালু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত রেল চলাচল
2022.05.20
কলকাতা ও ঢাকা
করোনা মহামারির কারণে দুই বছরের বেশি বন্ধ থাকার পর আবার চালু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার রেল যোগাযোগ। পুরোনো দুটির সাথে এবার নতুন আরেকটি ট্রেন যুক্ত হবে বলে জানিয়েছে দুই দেশের রেল বিভাগ।
ঢাকা-কলকাতার মধ্যে চলা মৈত্রী এক্সপ্রেস ও কলকাতা-খুলনার মধ্যে চলা বন্ধন এক্সপ্রেস আগামী ২৯ মে থেকে করোনা পূর্ববর্তী সময় অনুযায়ী চলাচল করবে বলে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশন।
এতে বলা হয়, মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে এবং বন্ধন এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করবে। এছাড়া আগামী ১ জুন জলপাইগুড়ি-ঢাকার মধ্যকার নতুন ট্রেন মিতালি এক্সপ্রেস নিউ জলপাইগুড়ি থেকে যাত্রা শুরু করবে।
মহামারির কারণে ২০২০ সালের ১৫ মার্চ থেকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়, সংক্রমণ কমে আসায় যা আবার চালু হচ্ছে ২৬ মাস পর।
“দুই দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ পুনরায় চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে রেল বিভাগ,” বেনারকে বলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনা করে “প্রয়োজনীয় সকল স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে” রেলের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে বলে জানান তিনি।
এতদিন বিশেষ ক্যাটেগরির ভিসা দেওয়া হলেও করোনাভাইরাসের কারণে ভ্রমণ ভিসা দেয়া বন্ধ ছিল জানিয়ে কলকাতার বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের প্রেস সচিব রঞ্জন সেন বেনারকে বলেন, “ইতিমধ্যেই ভারতীয়দের বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য টুরিস্ট ভিসা প্রদান শুরু হয়েছে।”
ট্রেন চালুর জন্য ‘মানুষ মুখিয়ে আছে’
ট্রেন চলাচল আবার শুরুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই দেশের নাগরিকেরা।
“অনেকদিন ধরে বাংলাদেশে যাব বলে অপেক্ষা করেছি। এবার ট্রেন চালু হওয়ায় আবার বাংলাদেশ দেখার এবং স্বজনদের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ হবে,” বেনারকে বলেন কলকাতার সন্তোষপুরের বাসিন্দা সন্তোষ দেবনাথ।
ট্রেন না থাকায় “অনেক কষ্ট করে বেশি খরচে” ভারতে আসতে হয়েছে বলে বেনারকে জানান বর্তমানে চিকিৎসার কারণে ভারতে অবস্থান করা বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা রতন সেন।
“এবার ট্রেন চালু হলে আরামের সঙ্গে দেশে ফিরতে পারব,” বলেন রতন।
দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল আবার চালু হাবার জন্য “মানুষ মুখিয়ে আছে” মন্তব্য করে গত বুধবার কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরা তরুণ লেখক কাজী জামশেদ বেনারকে বলেন, “কারণ ট্রেনে যাতায়াত আরামদায়ক এবং এতে টাকাও কম খরচও হয়।”
মিতালী এক্সপ্রেস চালু হওয়ার ফলে বাংলাদেশের মানুষ সহজেই পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ আসতে পারবেন বলে বেনারকে জানান হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট স্যান্যাল।
তিনি বলেন, “মিতালী এক্সপ্রেস চালুর ফলে উত্তরবঙ্গের পর্যটনে জোয়ার আসবে। বাংলাদেশিরা নিউ জলপাইগুড়ি নেমে সহজেই দার্জিলিং, ডুয়ার্সসহ উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ করতে পারবেন।”
মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে চলাচল করে। বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল করে কলকাতা ও খুলনার মধ্যে। মিতালী এক্সপ্রেস চলবে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হলদিবাড়ি সীমান্ত হয়ে ঢাকার মধ্যে।
ট্যুর অপারেটরগুলোর তথ্য মতে, প্রতি বছর ট্রেনে করে বেশ কয়েক হাজার মানুষ দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেন।
জার্মান ভিত্তিক নাগরিক তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টার হিসাব মতে, প্রতি বছরে ভারতে ভ্রমণ করতে আসা মানুষের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক আসেন পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ থেকে।
ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, করোনার আগের বছর ২০১৯ সালে এক কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজারের বেশি বিদেশি ভারতে ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫ লাখ ৭৮ হাজার, যা কোনো একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ৭৭ শতাংশ গেছেন বেড়াতে এবং ১৫ শতাংশের বেশি গেছেন চিকিৎসার উদ্দেশ্যে।
ওই বছর বাংলাদেশিদের জন্য মোট ১৫ লাখ ভিসা দিয়েছিল ভারত।
২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিন থেকে ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হয়। আর ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর থেকে কলকাতা ও খুলনার মধ্যে চালু হয় বন্ধন এক্সপ্রেস। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ ভার্চুয়ালি মিতালী এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা।
৫ মাস পর অন-অ্যারাইভাল ভিসা চালু
করোনা পরিস্থিতিতে পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর সব ক্যাটাগরিতে বিনা ভিসায় বাংলাদেশে বিদেশিদের আগমনী ভিসা (ভিসা অন-অ্যারাইভাল) আবারো চালু করেছে বাংলাদেশ।
তবে অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে বলে জানানো হয় মঙ্গলবার জারি করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের এ সংক্রান্ত এক পরিপত্রে।