সীমান্তে বাংলাদেশি এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে বিএসএফ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

পরিতোষ পাল
2021.07.30
কলকাতা
সীমান্তে বাংলাদেশি এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে বিএসএফ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর এক কর্মকর্তার হাতে ধর্ষিতা বাংলাদেশি নারীকে (ডানে) তাঁর সঙ্গীসহ পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ মহকুমা আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ২৯ জুলাই ২০২১।
[বেনারনিউজ]

বাংলাদেশি এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের এক কর্মকর্তাকে বৃহস্পতিবার দুই দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির এক আদালত। পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ মহকুমা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বেনারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

শুক্রবার তিনি জানান, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় কর্মরত রামেশ্বর কয়াল নামে ১৫৮ ব্যাটালিয়নের ওই বিএসএফ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভারতীয় পেনাল কোডের ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

একজন ম্যাজিস্ট্রেট ওই নারীর গোপন জবানবন্দিও লিপিবদ্ধ করেছেন বলে জানান আইনজীবী সমীর দাস। 

জানা যায়, বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী ওই নারী তিনবছর আগে অবৈধভাবে ভারতে আসেন। গুজরাটে এক শাড়ির দোকানে কাজ করতেন তিনি। গত মঙ্গলবার রাতে সীমান্ত পেরিয়ে দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। 

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণার গাইঘাটা থানায় দেওয়া নারীর বয়ান অনুযায়ী, ২৭ জুলাই রাতে দালালের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ যাওয়ার সময় বিএসএফ সদস্যরা অভিযোগকারীসহ দুই নারীকে আটক করে। খয়ের মাঠ বিএসএফ ক্যাম্পে তাঁদের আনার পর অভিযুক্ত বিএসএফ অফিসার (এসআই) রাতে অভিযোগকারী নারীকে এককভাবে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ক্যাম্পের মধ্যেই তাঁকে ধর্ষণ করেন। 

এরপর তাঁদেরকে পুলিশের হাতে দিলে ভুক্তভোগী নারী পুলিশের কাছে বিএসএফ অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেন। অভিযোগ পাওয়ার পরই বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে বলে স্থানীয় থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বেনারকে জানান। 

তবে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার অভিযোগে অভিযোগকারী নারী ও তাঁর সঙ্গীকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আদালত দুজনকেই বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। দুই নারীই বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের বাসিন্দা বলে পুলিশকে জানান। 

পুলিশ সূত্রে বলা হয়, বৃহস্পতিবারেই স্থানীয় বনগাঁ সাবডিভিশনাল হাসপাতালে নির্যাতিতা নারীর মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে। 

বিএসএফ কর্তৃপক্ষ শুক্রবার পর্যন্ত তাদের অফিসারের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গের ডিআইজি এস এস গুলেরিয়াকে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে মুঠোফোনে কল ও বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। 

তবে বিএসএফের এক কর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে জানান, কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে তাঁকে সাসপেন্ড করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। 

‘সীমান্তে ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়’

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সীমান্তে আটক হওয়ার পর বিএসএফ সদস্যদের হাতে কিশোরী ও নারীদের ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়। 

বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) সাধারণ সম্পাদক কিরীটি রায় বেনারকে বলেন, “সীমান্ত এলাকায় কিশোরী ও নারী ধর্ষণের ঘটনা প্রচুর ঘটে। তবে সব ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ জানানোয় ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছে।” 

“মাসুমের পক্ষ থেকে বহুবার বিএসএফের হাতে ধর্ষিত হবার ঘটনা নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে শুরু করে বিএসএফকে পর্যন্ত জানিয়ে প্রতিকারের দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু বিএসএফে কর্তৃপক্ষ কোনো সময়েই তাদের জওয়ান ও অফিসাররা কোনো অপরাধ করেছে বলে স্বীকার করতে চায় না,” বলেন এই মানবাধিকার কর্মী। 

বনগাঁ এলাকার স্থানীয় এক সমাজকর্মী বিপ্লব দাশ বেনারকে বলেন, “বিএসএফ কর্তারা সব সময় সাফাই গান যে, বাংলাদেশিরা নিজেদের অন্যায় কাজ ও অপরাধ এড়িয়ে যেতেই মিথ্যা অভিযোগ এনে বিএসএফের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করে।” 

সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, “যারা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত তারা যদি এই ধরনের অনৈতিক কাজ করে তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হয়।” 

“রক্ষকই যদি ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে তারা সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?” মন্তব্য করেন আইনজীবী সমীর দাস। 

সাংবাদিকদের মুখোমুখি নির্যাতিতা নারী

বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে ধর্ষণের শিকার নারী সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ও আমার এক বন্ধু ভারত থেকে বাংলাদেশে যাচ্ছিলাম। এজন্য দালালকে দুজনে মিলে ৩০ হাজার রুপি দিয়েছিলাম। কিন্তু বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে যাই। তখন রাত প্রায় ১১টা।” 

“আটকের পরে রাত বারোটা নাগাদ আমাদের বিএসএফ ক্যাম্পে নিয়ে জেরা করা হয়। এই সময় বিএসএফের কোনো মহিলা সদস্য সেখানে ছিল না। ক্যাম্পের অন্য সদস্যরা লাইনম্যানের খোঁজে বেরিয়ে গেলে অভিযুক্ত অফিসার একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে আমাকে রেপ করে। আমার বন্ধুটি ঘরের এক কোণে ভয়ে দাঁড়িয়েছিল।” 

ওই নারী আরও জানান, “আমরা চোরাই পথে বাংলাদেশে যাচ্ছিলাম। আমি তিন বছর আগে ভারতে আসি। গুজরাটে এক শাড়ির শোরুমে কাজ করতাম।” 

তিনি নিজের নাম ও গোপালগঞ্জের বাসিন্দা বলেও গণমাধ্যমকে জানান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।