আইএসের ভারত শাখার প্রধানকে আটকের দাবি আসাম পুলিশের
2024.03.21
কলকাতা ও ঢাকা
আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ভারত শাখার প্রধান ও তাঁর এক সহযোগীকে আটকের দাবি করেছে দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম পুলিশ।
বৃহস্পতিবার আসাম পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) ইনস্পেকটর জেনারেল পার্থসারথী মহন্ত সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে থেকে প্রবেশের সময় আইএস ভারত শাখার প্রধান হারিস আজমল ফারুকি ও তাঁর সহযোগী অনুরাগ সিংকে আসামে আটক করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আটক হারিস দেরাদুনের এবং অনুরাগ পানিপথের বাসিন্দা। তাঁরা দুজনই ভারতীয় নাগরিক। তাঁদেরকে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনআইএ) কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে।
অনুরাগ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে রেহান নাম নিয়েছেন জানিয়ে পার্থসারথী বলেন, রেহানের স্ত্রী বাংলাদেশে থাকেন।
আসামে দুই জঙ্গি আটকের ব্যাপারে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানে না বলে বেনারকে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, “যারা ধরা পড়েছে তারা কি বাংলাদেশি? বাংলাদেশি যদি না হয়, তাহলে আমরা মাথা ঘামাব কেন? ভারতের নাগরিক ভারতে ধরা পড়েছে, এখানে আমাদের তো কিছু করার নেই। এটি তাদের ব্যাপার।”
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আটক
আসাম পুলিশের জনসংযোগ প্রধান প্রণবজ্যোতি গোস্বামী বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানান, ২০ মার্চ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের পর ধুবড়ির ধর্মশালা থেকে ওই দুজনকে আটক করা হয়।
আটক করে তাঁদেরকে গুয়াহাটিতে নিয়ে আসার পর তাঁদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এ দুজন সম্পর্কে আগাম তথ্য পেয়ে গোপনে অভিযানের প্রস্তুতি নেয়া হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান এসটিএফ প্রধান পার্থসারথী মহন্ত।
জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক, স্থানীয় যোগাযোগকারী, অর্থ যোগানদাতা ও বিস্ফোরক সংগ্রহ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে আটক দুজনকে জেরা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এই দুই জঙ্গির গ্রেপ্তার নিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা তার এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “আমরা মোদির নেতৃত্বে ভারতের মাটি থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে ও মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হারিস ও তাঁর সহযোগী রেহান ভারতে আইএসের মতাদর্শ প্রচারে সক্রিয়ভাবে কাজ করছিলেন। হারিস সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ ও বিস্ফোরক সংগ্রহের মাধ্যমে নাশকতামূলক কাজে যুক্ত ছিলেন।
এনআইএ সূত্র অনুসারে, ভারতের দিল্লি, লক্ষ্ণৌ ও অন্যান্য স্থানে হারিসের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা রয়েছে। এনআইএ অনেক দিন ধরেই তাঁদের খুঁজছিল। দিল্লির আইএস মডিউলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তীর মতে, “সাধারণ মানুষ সন্ত্রাস পছন্দ করছে না বলেই জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।”
“নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতেই এরা মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে,” বেনারকে বলেন তিনি।
‘দোষারোপ করে কোনো লাভ নেই’
ইসলামিক স্টেট ভারত শাখার প্রধান ধরা পড়া “বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের জন্যই সুখবর” বলে বৃহস্পতিবার বেনারের কাছে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ।
তবে তাঁর মতে, ভারতে “জঙ্গি ধরা পড়লেই বাংলাদেশের নাম জড়িয়ে দিয়ে বক্তব্য ও বিবৃতি দেওয়া আসলে কতটুকু যৌক্তিক, সে বিষয়ে ভেবে দেখা দরকার।”
তিনি বলেন, “যখন কেউ তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে না, তখন তারা অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়। জঙ্গি ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের নাম জড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার একটি বড়ো কারণ হলো সংশ্লিষ্ট ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা।”
“আরেকটি কারণ হতে পারে আসামে নির্বাচন আসন্ন। নির্বাচনের আগে জঙ্গি ধরা পড়ার খবর কোনো কোনো দলের ভোটের বাক্স ভারী করতে পারে। ভারতে নির্বাচনের আগে সাধারণত এ ধরনের খবর দেখা যায়,” যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ও ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে কাজ করলে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি থেকে দুই দেশই মুক্ত থাকতে পারবে জানিয়ে তিনি বলবেন, “দোষারোপ করে কোনো লাভ নেই।”