বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটনের দুয়ার খুলেছে ভারত, যাওয়া যাবে শুধু বিমানে

কামরান রেজা চৌধুরী
2021.11.15
ঢাকা
বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটনের দুয়ার খুলেছে ভারত, যাওয়া যাবে শুধু বিমানে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এক শিশু যাত্রীর তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন একজন স্বাস্থ্যকর্মী। ১১ মার্চ ২০২০।
[রয়টার্স]

করোনা মহামারি শুরুর পর সোমবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটন ভিসা দেয়া শুরু করেছে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উন্নতি হওয়ায় ১৫ নভেম্বর থেকে পর্যটন ভিসা উন্মুক্ত করার কথা গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের জানান বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।

সেই ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার থেকে ভারতীয় পর্যটন ভিসার আবেদন গ্রহণ করা হয় বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, ১২০ দিনের জন্য এই ভিসা দেওয়া হবে। পর্যটকেরা এক ভ্রমণে ৩০ দিন ভারতে অবস্থান করতে পারবেন।

শর্ত অনুযায়ী, যাঁরা ভারত যাবেন তাঁদেরকে উড়োজাহাজে ভ্রমণ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে সড়ক ও রেলপথে ভিসা চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন বিক্রম দোরাইস্বামী।

তবে বাংলাদেশে ভারতীয় নাগরিকদের ভ্রমণের বিষয়ে সোমবার পর্যন্ত তাঁদের কাছে কোনো সরকারি নির্দেশনা পৌঁছায়নি বলে বেনারকে জানান কলকাতায় বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

‘এখনো অনেকে জানেন না

ভারতে ভ্রমণ ভিসা উন্মুক্ত করার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশিরা।

ভারতীয় ভিসা আবেদন প্রস্তুত করার কাজ করেন জাকির হোসেন। সোমবার তিনি বেনারকে বলেন, “সোমবার পর্যটন ভিসা উন্মুক্ত করার প্রথম দিনেই আমি তিনটি আবেদন প্রসেস করেছি।”

ভারতের পর্যটন ভিসা উন্মুক্ত করার বিষয়টি অনেকে এখনও জানেন না মন্তব্য করে জাকির বলেন, “আশা করা যায়, দুই এক দিনের মধ্যে আবেদন জমা দেয়ার সংখ্যা বাড়বে।”

ভারতীয় পর্যটন ভিসার জন্য আবেদন করা ব্যবসায়ী মাসুম বিল্লাহ সোমবার বেনারকে বলেন, “করোনা মহামারির কারণে ভিসা বন্ধ থাকায় আমি গত প্রায় দুবছর কোথাও যেতে পারিনি। ভারত আমাদের কাছের দেশ। তাই, এই সুযোগে ঘুরে আসতে চাই।”

“আমাদের দেশের অনেকেই পর্যটনের উদ্দেশ্যে ইউরোপ-আমেরিকা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়া যেতে পারেন না। স্বল্প আয়ের বেশিরভাগ মানুষের গন্তব্য ভারত। কারণ সেখানে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে,” বলেন মাসুম বিল্লাহ।

পর্যটন ভিসা উন্মুক্ত করার জন্য ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “তাঁদের উচিত শুধু উড়োজাহাজ নয়, রেল ও স্থল পথে যাতে মানুষ ভারত যেতে পারে সেই সুযোগ নিশ্চিত করা। তাহলে অনেক স্বল্প আয়ের মানুষও দেশটিতে যেতে পারবে।”

গত বছর মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার কিছুদিন পর বাংলাদেশ থেকে সকল ধরনের পর্যটক আগমন বন্ধ করে দেয় ভারত। এরপর বাংলাদেশও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আগমন বন্ধ করে।

বর্তমানে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের হার শতকরা এক ভাগের কিছু বেশি, মৃত্যুর হারও এক সংখ্যায় নেমে এসেছে। পরিস্থিতির এই উন্নতি হওয়ার পর প্রথমে চিকিৎসার জন্য ভারত গমনেচ্ছুদের জন্য ভিসা দেওয়া হলেও পর্যটন ভিসা বন্ধ থাকে।

বাংলাদেশ থেকে ঠিক কত সংখ্যক পর্যটক প্রতি বছর ভারত যান সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ পাওয়া যায়নি।

সাবেক ভারতীয় দূতাবাসের হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর এক টুইট বার্তায় জানান, ২০১৯ সালে ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ১৫ লাখ ভিসা দিয়েছে।

এই সংখ্যা সারাবিশ্বে ভারত সরকারের দেয়া ভিসার শতকরা প্রায় ২০ ভাগ। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৬০ হাজার এবং ২০১৭ সালে ১৩ লাখ ৮০ হাজার।

বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ সোমবার বেনারকে বলেন, অধিকাংশ মানুষই ভারত যায় বেড়াতে, এরপর যায় চিকিৎসার জন্য।

তিনি জানান, “আমরা হিসাব করে দেখেছি, একজন পর্যটক ভারত গিয়ে চার-পাঁচ দিন অবস্থান করলে তিনি কমপক্ষে এক হাজার ২০০ ডলার খরচ করেন।”

ভারত গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে পর্যটন খাত উন্মুক্ত করার প্রচার চালাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এখনও পর্যটন খাত উন্মুক্ত করিনি। পর্যটন বোর্ড থেকে এই খাত উন্মুক্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে, যা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।

করোনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পর্যটন। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ খাতের স্থবিরতায় ২০২০ সালে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) লোকসান হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা (৩০১ কোটি ডলার। আর চাকরি হারিয়েছেন চার লাখের বেশি মানুষ।

প্রতিবছর ডব্লিউটিটিসি এবং অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স পর্যটন খাতের ১৮৫টি দেশে অর্থনৈতিক অবদানের বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। ২০২১ সালের ‘পর্যটন শিল্পের অর্থনৈতিক প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভ্রমণ ও পর্যটন খাত ২০২০ সালে জিডিপিতে ৫৫ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা অবদান রেখেছে, যা ২০১৯ সালে ছিল ৮০ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।

অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে লোকসান ২৬ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

ডব্লিউটিটিসি বলছে, কোভিড-১৯ সংকটের মধ্যে গত বছর দেশের পর্যটন খাতে জড়িত ৪ লাখের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পে ১৮ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান ছিল। ২০২০ সালে তা কমে ১৪ লাখে দাঁড়িয়েছে, কর্মসংস্থান কমেছে ২১ দশমিক ৯ শতাংশ।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কলকাতা থেকে পরিতোষ পাল।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।