ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ: সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের তলব করেছে উচ্চ আদালত

আহম্মদ ফয়েজ
2023.01.06
ঢাকা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ: সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের তলব করেছে উচ্চ আদালত সাধারণ কর্মদিবসে হাজার হাজার বিচারপ্রার্থীর পদচারণা থাকলেও বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনার পর প্রায় জনশূন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালত। ৬ জানুয়ারি ২০২৩।
[বেনারনিউজ]

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনায় দেশে নানামুখী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনার জেরে সেখানে বিচারকাজ বন্ধ থাকার ঘটনাও ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের তলব করেছে উচ্চ আদালত। বিচারকদের একটি সংগঠন অভিযুক্ত আইনজীবীদের শাস্তি দাবি করেছে।

ওই ঘটনাকে ভয়ানক এবং দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য করে শুক্রবার আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, আদালতে এর বিচার হবে।

গত ১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ একটি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তানভীর ভূঁইয়াসহ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের কথা কাটাকাটি হয়।

পরবর্তীতে বিচারককে গালিগালাজের ঘটনার একটি ভিডিও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৪ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ হাইকোর্ট বিভাগে লিখিত অভিযোগ পাঠান। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল লিখিত অভিযোগ হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।

অভিযোগ প্রাপ্তির একদিন পর ৫ জানুয়ারি এজলাসে হট্টগোল ও বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিনজনকে তলব করা হয়। পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার দায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না-- জানতে চেয়ে রুল জারি করেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আগামী ১৭ জানুয়ারির মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা বাকি দুই আইনজীবী হলেন—সমিতির সম্পাদক (প্রশাসন) মো. আক্কাস আলী ও আইনজীবী জুবায়ের ইসলাম।

“প্রধান বিচারপতির কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের বিচারক এবং অন্য বিচারকরা অভিযোগ করেছেন, ভিডিও পাঠিয়েছেন। সেখানে দেখা গেছে, একজন বিচারকের প্রতি তাঁদের আচরণ খুবই খারাপ ছিল, সেটা আমি শুনেছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন। এটা এখন বিচারকদের ব্যাপার। আদালত বিচার করবেন,” বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঁইয়া। তানভীর বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও।

“বিচারকের সঙ্গে বাগ-বিতণ্ডার সময় আদালতে কর্মরত একটি ছেলে ভিডিও করছিল, আমরা তাকে সরে যাওয়ার কথা বলেছি। কোনো বিচারককে সরে যেতে বলিনি। তবে এটিকে ভিন্ন খাতে ধাবিত করে বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে একটি মহল,” বৃহস্পতিবার আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন তানভীর।

অপরদিকে আইনজীবী ও বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সোমবারের পর থেকে অনেকটা স্থবির রয়েছে জেলা আদালতের কার্যক্রম।

জড়িতদের শাস্তি দাবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মফিজুর রহমান বাবুল সাংবাদিকদের বলেন, “বুধবার জেলা জজের প্রত্যক্ষ মদদে তাঁর অধীনস্থ কর্মচারীরা আদালতের সব দরজা বন্ধ করে মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন করেছেন। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার বিচারপ্রার্থী আদালতে বিচারের জন্য আসেন।”

এই ঘটনার জন্য জেলা জজ শারমিন নিগারকে দায়ী করে তাঁর এবং নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ ও নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ দাবি করেছে আইনজীবী সমিতি, জানান মফিজুর।

এদিকে বিচারকের সঙ্গে শিষ্টাচার বহির্ভূত ও অশালীন আচরণে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএস) সপ্তম ব্যাচ।

শুক্রবার গণমাধ্যমে সংগঠনটির সভাপতি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া ও মহাসচিব ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের পাঠানো বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়, “কতিপয় আইনজীবী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর এজলাস কক্ষে বেআইনিভাবে বিচারিক কাজে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেন। একইসঙ্গে তাঁরা বিচারকের সঙ্গে শিষ্টাচার বহির্ভূত ও অশালীন আচরণ করেন; যা অনভিপ্রেত, ন্যক্কারজনক ও দুঃখজনক। এতে বিচার বিভাগের মর্যাদা ও সম্মান মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।”

শিষ্টাচার বহির্ভূত ওই আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিজেএস বলেছে, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের নিন্দনীয় ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ কাজ করার দুঃসাহস না দেখায়।

শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আদালতের ঘটনাকে ভয়ানক এবং দুর্ভাগ্যজনক বলে অবহিত করেছেন আইনমন্ত্রী।

এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে খুলনা আদালতে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের ঘটনায় হাইকোর্টে ক্ষমা চেয়ে পার পান জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিনজন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।