সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে সরকারি নথি চুরির সত্যতা পায়নি পুলিশ

আহম্মদ ফয়েজ
2022.10.26
ঢাকা
সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে সরকারি নথি চুরির সত্যতা পায়নি পুলিশ ঢাকার একটি আদালতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে (মাঝখানে) হাজির করছে পুলিশ। ১৮ মে ২০২১।
[এপি]

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি নথি ‘চুরি করার চেষ্টার’ অভিযোগে ঔপনিবেশিক আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে দায়ের করা মামলায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে আদালতের প্রতিবেদনে জানিয়েছে পুলিশ।

“তাঁর (রোজিনা) বিরুদ্ধে অপরাধের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন,” বেনারকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন বিভাগ) মোঃ জসিম উদ্দীন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবির পুলিশ পরিদর্শক মোরশেদ আলম খান মামলা থেকে রোজিনা ইসলামকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

তদন্ত কর্মকর্তা রোজিনাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গত ৪ জুলাই আদালতে দাখিল করেন বলে বেনারকে জানান দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিবেদক রোজিনার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার।

তিনি বলেন, “রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ না পেয়ে পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। আদালত ইতোমধ্যে মামলার বাদীকে নোটিশ দিয়ে জানতে চেয়েছেন এ বিষয়ে তাঁর কোনো আপত্তি আছে কিনা।”

আগামী ১৫ নভেম্বর আদালতে এই বিষয়ে শুনানি হবে এবং সেখানেই এই মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে বলে জানান প্রশান্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ডাঃ মোঃ শিব্বির আহমেদ ওসমানী বেনারকে বলেন, “আমি চিঠি পেয়েছি। রোজিনা ইসলামের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নেই। কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে করণীয় ঠিক করা হবে।”

সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক

১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

তিনি বলেন, সংবিধানে মৌলিক অধিকার বিষয়ে যেসব অনুচ্ছেদ আছে, সেগুলো মানতে হলে কোনোভাবে ঔপনিবেশিক আমলের এই আইনটি থাকতে পারে না।

রোজিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে প্রথম মামলা বলেও জানান তিনি।

রোজিনার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় গুপ্তচরবৃত্তি ও রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজের দখলে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছিল বলে জানান তাঁর আইনজীবী প্রশান্ত।

এই ধারাগুলো অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে, মামলার এই পর্যায়ে বেনারের কাছে কোনো মন্তব্য করতে চাননি রোজিনা ইসলাম।

আর্টিকেল নাইনটিনের সাধুবাদ

অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের বিতর্কিত মামলায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়ায় কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করা সংস্থাটি একই সঙ্গে আশা প্রকাশ করে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে আদালত দাখিলকৃত চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে এই হয়রানিমূলক মামলা থেকে রোজিনাকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি দেবে।

বুধবার এ বিষয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, “আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি রোজিনা ইসলাম আদালত থেকেও চূড়ান্ত অব্যাহতি ও ন্যায়বিচার পাবেন।”

এই মামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে এবং রাষ্ট্র হিসেবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা ও সাংবাদিকদের সুরক্ষা প্রদানের প্রতিশ্রুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করি, দেরিতে হলেও, এই মামলা দায়েরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা রোজিনা ইসলামের ন্যায় বিচার পাওয়ার পথকে আর বাধাগ্রস্ত করবেন না।”

২০২১ সালের ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা ও নির্যাতন করা হয়।

একই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত ১২টার দিকে তাঁর বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এক সপ্তাহের মাথায় গত বছরের ২৩ মে তিনি জামিনে ছাড়া পান।

রোজিনাকে হয়রানির ঘটনা দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। গত বছর সাহসী সাংবাদিকতার জন্য নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক সংস্থা ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড তাঁকে সেরা অদম্য সাংবাদিক বা মোস্ট রেজিলিয়েন্ট জার্নালিস্ট শ্রেণিতে ‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড-২০২১’প্রদান করে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।