ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি: ৪ বাংলাদেশির মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে ইতালি
2024.07.09
ঢাকা
লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইতালি প্রবেশের চেষ্টাকালে গত মাসে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত ২২ জনের মধ্যে কমপক্ষে চারজন বাংলাদেশি বলে জানিয়েছে ইতালি সরকার।
দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব আসিফ আনাম সিদ্দিকী সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ১৮ জুন সিসিলির লাম্পেডোসা দ্বীপের কাছে এই নৌকাডুবির ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, উদ্ধারকর্মীরা নৌকার পাটাতনের নিচ থেকে ১০ জনের মরদেহ বের করে আনেন। ওই দুর্ঘটনায় অন্তত অর্ধশত মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে সে সময় বলা হয়েছিল, মৃত অভিবাসন প্রত্যাশীরা সিরিয়া, মিশর, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নাগরিক। তবে কতজন বাংলাদেশি মারা গেছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত পাওয়া যায়নি।
উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, ওই দিনই ইতালির ক্যালাব্রিয়ায় আরেকটি জাহাজ ডুবে ১২ জনের প্রাণহানি হয়। নিখোঁজ ছিলেন কমপক্ষে ৬৪ জন।
আসিফ আনাম বেনারকে জানান, গত ১৮ জুন দুর্ঘটনার পরে বাংলাদেশ থেকে পরিবারের সদস্যরা দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করার পর ওই দুই নৌকায় থাকা বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট নম্বর ইতালি কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়া হয়েছিল।
“তাঁরা চারজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। চার বাংলাদেশির মধ্যে দুইজন নরসিংদী, একজন মাদারীপুর ও একজন কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা। তবে ইতালি সরকার চায় না আমরা পরিচয় প্রকাশ করি,” বলেন আসিফ আনাম।
মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “মৃত্যু সনদে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা নৌকার পাটাতনের নিচে তেলের গন্ধে দম বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।”
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের যুবক লিখন ইতালি যেতে স্থানীয় দালালদের ১৪ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া গিয়ে কয়েক মাস আটক ছিলেন। গত ১৮ জুন যে দুটি নৌকা ডুবে যায়, তার একটিতে ছিল লিখন।
তাঁর ফুপাতো ভাই মো. এনামুল বেনারকে জানান নৌকা নিয়ে ইতালি যাত্রা শুরুর আগ পর্যন্ত লিখনের সাথে তাঁদের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু এর পর থেকে লিখনের ফোন বন্ধ।
“আর খোঁজ নেই। কী হয়েছে আমরা জানি না,” বলেন এনামুল।
লিখনের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা নিয়ে পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ২৩ হাজার মানুষ অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ প্রবেশ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
সারা দেশে দালাল
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ওয়ারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান সৈয়দ সাইফুল হক বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশ থেকে যাঁরা ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁদের একটি বড়ো অংশ মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা। যারা মূলত যুবক।”
এর বাইরে শরীয়তপুর, বরিশাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে যুবকরা ইতালি যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
“মাফিয়ারা এখন সারা দেশে দালাল নিয়োগ দিচ্ছে। তারা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ইতালি যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। এই ফাঁদে পা দিয়ে পরিবারগুলো পথে বসে যায়,” বলেন সাইফুল।
তাঁর মতে, অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রা কতটা বিপজ্জনক এটি যতদিন পর্যন্ত মানুষ বুঝবে না, “ততদিন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতেই থাকবে এবং প্রাণহানিও বন্ধ হবে না।”