ইসলামের নবীকে অবমাননার অভিযোগে ভোলায় সংখ্যালঘু নেতা গ্রেপ্তার
2021.09.17
ঢাকা
ফেসবুক মেসেঞ্জারে ইসলামের নবী সম্পর্কে ‘কুরুচিপূর্ণ’ কথোপকথনের একটি স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে দ্বীপ জেলা ভোলার পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ চন্দ্র দে–কে (৫৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা–কর্মীদের নেতৃত্বে প্রতিবাদ হলে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন গৌরাঙ্গ নিজেই থানায় যান এবং পুলিশ তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে বলে বেনারকে জানান জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার।
তবে এই ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানান তিনি।
১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় পুলিশ যে কাউকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করতে পারে।
“গৌরাঙ্গ ভালোভাবে ফেসবুক চালাতে জানেন না। তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন এবং পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে,” বলেন মোহাম্মদ কায়সার।
তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে গৌরাঙ্গের ফেসবুক হ্যাক হয়নি বরং তাঁর নাম ও ছবি ব্যবহার করে নতুন একটি অ্যাকাউন্ট খুলে সেই অ্যাকাউন্ট থেকে এই কাজটি করা হয়েছে। এখন আমরা অ্যাকাউন্টটির উৎস খতিয়ে দেখছি।”
তিনি জানান, ফেসবুক মেসেঞ্জারে গৌরাঙ্গ ও জয় রাম নামের দুটি আইডিতে চ্যাটিংয়ের স্ক্রিনশট বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই স্থানীয় আলেম–ওলামারা প্রতিক্রিয়া দেখান।
“যেহেতু এলাকায় এ নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে সেহেতু পুলিশ গৌরাঙ্গকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠিয়েছে,” বলেন তিনি।
গৌরাঙ্গ তাঁর মোবাইল ফোন থেকে যে ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করেন সেটি গৌরাঙ্গ চন্দ্র দে নামে হলেও যে আইডি থেকে মেসেঞ্জার কথোপকথন হয়েছে সেটি শুধু ‘গৌরাঙ্গ’ নামে খোলা জানিয়ে তিনি বলেন, কথোপকথনে যুক্ত জয় রাম নামে অপর ব্যক্তিটিকেও খুঁজছে পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, এলাকায় শিব পূজা আয়োজন বিষয়ক কথাবার্তার এক পর্যায়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে নিয়ে একটি মন্তব্য করা হয়, যেটিকে ‘কুরুচিপূর্ণ’ বলছেন স্থানীয় ইসলামী আন্দোলন কর্মীরা।
ওই স্ক্রিনশটটি জয় রাম নামের ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট হওয়ার বিষয়টিকে রহস্যজনক বলছে স্থানীয় পূজা উদযাপন পরিষদ।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অসীম সাহা বেনারকে বলেন, “ঘটনাটি সত্যিই রহস্যজনক। এলাকায় ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার অপকৌশল হিসেবে এটি কেউ ঘটিয়ে থাকতে পারে।”
তিনি বলেন, ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা গৌরাঙ্গর ব্যক্তিগত গাড়িতে ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সংখ্যালঘুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলেও জানান অসীম।
আন্দোলনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভোলা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, “ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নবীর অবমাননা সহ্য করতে পারে না বলেই আন্দোলন শুরু করেছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা বুধবার বিকেলে সরকারকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। তাকে গ্রেপ্তার করায় আমরা খুশি।”
“আমরা চাই ধর্ম অবমাননার দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করা হোক,” বলেন তিনি।
মুক্তির অপেক্ষায় ঝুমনের পরিবার
ভোলায় এই ঘটনা এমন সময়ে ঘটল যখন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষেরা পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দি থাকা ঝুমন দাস আপনের (২৮) মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছেন।
হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে করা মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বন্দি আছেন সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ঝুমন দাস।
বেনারের সাথে আলাপকালে ঝুমন দাসের ভাই নূপুর চন্দ্র দাস বলেন, “আমাদের পরিবার আশাবাদী যে পরবর্তী শুনানিতে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাবেন আমার ভাই।”
তিনি বলেন, “নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালত মিলিয়ে এ পর্যন্ত পাঁচবার ঝুমনের জামিনের আবেদন নাকচ হয়েছে।”
তিনি বলেন, একটি ফেসবুক মন্তব্যের জন্য এভাবে মাসের পর মাস কাউকে জেলে আটকে রাখা ন্যায় বিচারের অন্তরায়।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় সাত দাবি
সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার থেকে রক্ষা ও দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বাঁচাতে সাত দফা দাবি তুলে ধরেছে বাংলাদেশে জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংগঠনটির ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবিগুলো তুলে ধরা হয়।
সাতটি দাবি হচ্ছে; সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা, হিন্দু সম্প্রদায়ের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় হিন্দু সংখ্যালঘু বিষয়ক কমিশন গঠন করা, সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন না করা, বিশেষ নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংখ্যালঘুদের জন্য সংসদে ৬০টি আসন সৃষ্টি, সরকারি চাকুরিতে ২০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ করা এবং দুর্গাপূজায় তিন দিন ও রথযাত্রায় একদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।