মার্কিন রাজনীতিতে বাংলাদেশের বিষয়কে ‘ইস্যু’ করার পক্ষে নন সংখ্যালঘুরা
2024.11.01
ঢাকা
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর “বর্বর সহিংসতা”র যে অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প, সেটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা।
বৃহস্পতিবার রাতে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ট্রাম্প এক্স হ্যান্ডেলে দেয়া এক বার্তায় বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বর্বর সংঘবদ্ধ সহিংসতা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে উল্লেখ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমার সময়ে এটা কখনই হতো না। কমলা এবং জো আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে হিন্দুদের উপেক্ষা করেছেন।”
ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা তাঁর “স্থানীয় রাজনীতির ইস্যু হিসেবে” দেখছেন বলে শুক্রবার বেনারের কাছে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।
প্রসঙ্গত, ছাত্র ও গণ অভ্যুত্থানের মুখে গত আগস্টের শুরুতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মতে, ওইসব ‘বিচ্ছিন্ন’ হামলার বেশিরভাগই ঘটেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাথে সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে।
“আমাদের এখানে প্রায়ই সংখ্যালঘু নির্যাতন ও নানাবিধ ঘটনা ঘটে, স্বাধীনতার পর থেকেই এটি হয়ে আসছে। আমরা নিজেদের মাতৃভূমিতে বসেই সেগুলো নিয়ে কথা বলছি,” বলেন মনীন্দ্র কুমার নাথ।
বাংলাদেশের এই “অভ্যন্তরীণ ঘটনাকে” আমেরিকায় “রাজনৈতিক ইস্যু” বানানোকে তাঁরা ইতিবাচকভাবে দেখছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো বিদেশি রাষ্ট্র তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে আমাদেরকে ব্যবহার করলে তাতে আমরা সহমত পোষণ করতে পারি না।”
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে “রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য ধর্মকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়, ট্রাম্পের টুইট তার সুস্পষ্ট প্রমাণ,” বলে বিবিসির কাছে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, “হিন্দু ধর্মাবলম্বী, প্রধানত ভারতীয়দের ভোট নিশ্চিত করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য।”
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুকে শুক্রবার এক পোস্টে এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা অস্বীকার করছি না যে ধর্মীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিছু সহিংসতা ঘটেনি। কিন্তু সেসব ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং পরবর্তীতে অতিরঞ্জিত।”
সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত: মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর
ট্রাম্পের বক্তব্যের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচার শিবির ও হোয়াইট হাউসে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের অন্যান্য মৌলিক উপাদানের পাশাপাশি “ধর্মীয় ও বিশ্বাসের স্বাধীনতায় সমর্থন করে,” জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র শুক্রবার বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ আমাদের সকল অংশীজনের সাথে এই সমর্থনের বিষয়ে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করি।”
“আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যে কোনো ধরনের সহিংসতা ও অসহিষ্ণুতার নিন্দা জানাই এবং সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানাই,” বলেন ওই মুখপাত্র।