এক মাস পর জেল থেকে মুক্ত বিএনপির ফখরুল, আব্বাস

আহম্মদ ফয়েজ
2023.01.09
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
এক মাস পর জেল থেকে মুক্ত বিএনপির ফখরুল, আব্বাস কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে ঢাকায় বিএনপির নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ডানে)। তাঁর পাশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ৯ জানুয়ারি ২০২৩।
[বেনারনিউজ]

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এক মাস পর কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন।

হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের কাগজপত্র এবং আপিল বিভাগের জামিন বহাল রাখার আদেশে সোমবার বিকেলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ বিএনপির এই দুই নেতাকে ছয় মাসের জন্য জামিনে মুক্তি দেয়।

সোমবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফখরুল ও আব্বাস ছাড়া পান বলে বেনারকে নিশ্চিত করেন সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ ঘোষ।

“আমরা বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে মুক্তির আদেশ পাই। ছাড়পত্র পাওয়ার পর এবং জামিন আদেশের নথিপত্র ও প্রাসঙ্গিক জামিন আদেশের যাচাই-বাছাই শেষে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে তাঁদের কারাগার থেকে মুক্ত করা হয়,” বলেন সুভাষ।

গত বছরের ডিসেম্বরে রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মামলায় ৩২ দিন বন্দি থাকা এই দুই নেতাকে বরণ করে নিতে কেরানীগঞ্জের জেলগেটে কয়েকশ নেতাকর্মী জড়ো হন।

জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফখরুল সরাসরি দলের নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান। তিনি দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সেখানেও দলের কয়েকশ নেতাকর্মী ফখরুল ও আব্বাসকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষায় ছিলেন।

সমাবেশে ফখরুল দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে।

“আমাদের পিছু হটবার কোনো পথ নেই। যে আন্দোলন আমরা শুরু করেছি, সেই আন্দোলনে আমরা কামিয়াব হব। আমাদের আন্দোলন আরও তীব্র করতে হবে এবং সেই তীব্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এদেরকে (সরকারকে) পরাজিত করতে হবে,” বলেন ফখরুল।

অপেক্ষমাণ নেতাকর্মীদের ফখরুল বলেন, “আসুন, আমরা আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যাই, বাংলাদেশকে মুক্ত করি। এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করি। এই শপথে আমাদের আজকে জেল থেকে বেরিয়ে আসা, এটা নতুন অঙ্গীকার। আজকে আমরা আবার অঙ্গীকার করছি, বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা চলতেই থাকব।”

সরকার সারা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে দাবি করে ফখরুল বলেন, “তারা (সরকার) ভেবেছিল, গ্রেপ্তার করে, হামলা করে, কারাগারে আটক রেখে, বিএনপির অফিস ভেঙে, অত্যাচার করে, হত্যা করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বন্ধ করে দেবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি, নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও সর্বোপরি ভোটের অধিকার রক্ষার আন্দোলনকে তারা বন্ধ করে দেবে। কিন্তু তা কি হয়েছে? আন্দোলন আরও শক্তিশালী, আরও বেগবান হয়েছে।”

“যত বেশি অত্যাচার করবে, যত বেশি নির্যাতন করবে, তত বেশি মানুষ ফুঁসে উঠবে এবং বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের পরাজিত করবে,” বলেন এই বিএনপি নেতা।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে ৯ ডিসেম্বর ভোররাতে রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে ফখরুল ও আব্বাসকে তাঁদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

একই দিন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠায় এবং ৯ ডিসেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চার দফায় নিম্ন আদালতে তাঁদের জামিন আবেদন নাকচ হয়।

বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন বলে গত ৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট মানবিক কারণ বিবেচনায় ছয় মাসের জামিন দেয় ৭৪ বছর বয়সী ফখরুল ও ৭১ বছর বয়সী আব্বাসকে। এই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে তা আরো বিলম্বিত হয়।

সর্বশেষ রোববার তাঁদের জামিন আদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ এবং এই প্রেক্ষাপটে সোমবার কারামুক্ত হন বিএনপির এই দুই নেতা।

গত ৭ জানুয়ারি নয়া পল্টন এলাকায় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় ফখরুল ও আব্বাসকে।

পুলিশের মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ফখরুল ও আব্বাস বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশির সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালনে বাধা দিতে নেতাকর্মীদের উস্কানি দেওয়া এবং পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।